সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মতবাদের দোহাই দিয়ে চিনে সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন নতুন কিছু নয়। কমিউনিস্ট দেশটিতে ‘শিক্ষা’ ও ‘মৌলবাদ দমনের’ নামে উইঘুর মুসলিমদের থেকে শুরু করে খ্রিস্টানদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এবার আরও একধাপ এগিয়ে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের যিশুর বদলে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ছবি টাঙানোর নির্দেশ দিয়েছে বেজিং।
চিনা প্রশাসনের যুক্তি, দেশ থেকে দারিদ্র দূর করতে সমস্ত সম্ভব চেষ্টা করছে প্রশাসন। এই লড়াইয়ে প্রভু যিশু খ্রিস্টানদের পাশে দাঁড়াবেন না। তাঁদের বাঁচালে প্রেসিডেন্ট জিনপিংই বাঁচাবেন। তাই আনহুই, জিয়াংসু, হুবেই ও ঝেজিয়াং প্রদেশের গির্জাগুলিতে রাখা ক্রশ নামিয়ে নষ্ট করে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা। এমনকী ওইসব প্রদেশে কারও বাড়িতেও যিশুর ছবি না রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তার বদলে প্রেসিডেন্ট জিনপিং ও মাও-এর ছবি টাঙানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। চিনের শাংসি প্রদেশের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি থেকে যিশুর ছবি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওইসব প্রদেশে খ্রিস্টানরা একজোট হয়ে চিন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেছেন। গত শনিবার ও রবিবার আনহুই প্রদেশের একাধিক গির্জার ক্রশ ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। রেডিও ফ্রি এশিয়া জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন প্রদেশে খ্রিস্টানদের এমন নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
উল্লেখ্য, গত বছর বিতর্ক উসকে মুসলমানদের মধ্যে ‘সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধ’ দৃঢ় করতে নতুন করে কোরান লেখার নির্দেশ দেয় চিন। শুনতে অবাক লাগলেও, বেজিংয়ের সাফ কথা, সমস্ত ইসলামিক গ্রন্থের পুনর্মূল্যায়ণের সময় এসেছে। কমিউনিস্ট পার্টির এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছিলেন, নয়া কোরানে এমন কোনও কথা লেখা থাকবে না যা দেশ ও দলের মতবাদের পরিপন্থী। বর্তমানের ইসলামিক ধর্মগ্রন্থটি থেকে ‘মৌলবাদে উসকানি’ দেয় এমন সমস্ত পরিচ্ছদ বাদ দেওয়া হবে। গত নভেম্বর মাসেই এই সিদ্ধান্ত নেয় ‘জনজাতি ও ধর্ম বিষয়ক কমিটি’।
এদিকে, শুধু কোরান নয়, বাইবেলেরও নয়া সংস্করণ তৈরি করতে চলেছে চিন। সব মিলিয়ে সংখ্যালঘুদের ধার্ম ও আচারে কড়া নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে উঠেপড়ে লেগেছে শি জিনপিংয়ের প্রশাসন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসলামিক সন্ত্রাসে অশান্ত জিনজিয়াং প্রদেশ নিয়ে উদ্বেগে ভুগছে বেজিং। ফলে সমস্ত মসজিদ ও ধার্মিক অনুষ্ঠানে কড়া নজর রেখেছে সে দেশের প্রশাসন। উল্লেখ্য, উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চিনা প্রশাসনের নীতি বিশ্বের অজানা নয়। ‘শুদ্ধিকরণের’ নামে জিনজিয়াং প্রদেশের প্রায় ১০ লক্ষ উইঘুরকে ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’ বা বন্দি শিবিরে রাখা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.