সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিনা সংস্থা সিনোফার্মের (Sinopharm) তৈরি করোনা টিকা সম্পর্কে জনগণকে সাবধান করে সরকারের রোষে চিনের চিকিৎসক। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সমস্ত পোস্ট মুছতে বাধ্য করা হল তাঁকে, এমনকী দেশবাসীর কাছে তাঁকে ক্ষমাও চাইতে হল। এরপর সংবাদমাধ্যমে তিনি নিজের বয়ানও বদল করেন। জিনপিং প্রশাসনের এই পদক্ষেপে ফের সংশয় উসকে উঠল। এমনিতেই নিজেদের এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের রিপোর্ট পেশ না করেই বাজারে আনতে চলেছে। তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কেউই বস্তুত কিছু জানেন না। আর সে বিষয়ে সতর্ক করতে গিয়েই রোষের শিকার হলেন চিনা চিকিৎসক তাও লিনা।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পাতায় ডক্টর লিনা জানিয়েছিলেন যে সিনোফার্মের টিকার অন্তত ৭৩ রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, ভ্যাকসিনের বাজারে এর সুরক্ষা সবচেয়ে কম। তাও লিনা নিজে একজন প্রতিষেধক বিশেষজ্ঞ (Vaccine expert)। তাই নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি সতর্ক করেছিলেন। তাঁর মতে, সিনোফার্মের তৈরি করোনা ভ্যাকসিনে (Corona vaccine) নেওয়ার পর বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। ইঞ্জেকশনে অংশে যন্ত্রণা, মাথাব্যথা, দৃষ্টি ও ঘ্রাণশক্তি কমে আসা, উচ্চ রক্তচাপ-সহ একাধিক সমস্যা ভুগছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তাঁর এই সতর্কবার্তা ভাইরাল হতেই নেমে আসে শাস্তির খাঁড়া। চাপে পড়ে পরবর্তীতে তিনি বয়ান বদল করতে বাধ্য হলেন। সংবাদমাধ্যমে দাবি করলেন, তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। তিনি টিকার নিরাপত্তা নিয়ে কোনও নেতিবাচক কথাই বলেননি।
এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর, চিনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে উইবোতে (Weibo) এ নিয়ে শোরগোল শুরু হতে না হতেই তাঁর সমস্ত পোস্ট মুছে ফেলা হয়। স্বদেশে তৈরি প্রতিষেধক নিয়ে এমন মন্তব্যের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হয় তাঁকে। এসবের পর অবশ্য সংবাদমাধ্যে ডক্টর তাও লিনা সম্পূর্ণ উলটো কথা বলেন। বলেন, ”আমি কখনওই ভ্যাকসিন যথাযথ সুরক্ষিত নয়, এমন কথা বলিনি। বরং এটাই জোর দিয়ে বলতে চেয়েছি যে মানুষজন টিকাকরণ নিয়ে যে সুরক্ষার অভাব বোধ করছেন, সিনোফার্মের ভ্যাকসিনটি সেদিক থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ।” বোঝাই যাচ্ছে, চাপে পড়েই একজন ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞের এই বয়ান বদল।
আসলে ডক্টর লিনার সতর্কবার্তাকে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, চিন (China) নিজেই সিনোফার্মের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কোনও রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে স্রেফ এটুকু জানিয়েছে যে, ভ্যাকসিনটি ৭৯ শতাংশ কার্যকরী। অথচ এই অবস্থায় জরুরি পরিস্থিতিতে তা প্রয়োগে ছাড়পত্র দিয়েছে চিন। ফলে টিকা আদৌ কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে প্রশ্ন আছেই। আর নিজেদের কীর্তি গোপন রাখতে চিনের চাতুর্যের কথা কে না জানে! ইউহানের করোনা সংক্রমণ নিয়ে চিনের ভূমিকা এখনও সর্বস্তরে নিন্দনীয়। এবার টিকার নিরাপত্তা নিয়ে লুকোচুরি। সবমিলিয়ে বিষয়টি যে বেশ ধোঁয়াশার, ডক্টর তাও লিনাকে নিয়ে জিনপিং প্রশাসনের পদক্ষেপই তার যথেষ্ট প্রমাণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.