সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সংস্কার নিয়ে আমেরিকাকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিল চিন। চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, সংস্কার নিয়ে চিন কোন পথে যাবে তা নিয়ে কোনও দেশের জ্ঞান বা পরামর্শ শুনবে না। কোনও দেশে যেন আগ বাড়িয়ে এ ব্যাপারে চিনকে যেন জ্ঞান না দেয়। কারণ চিন জানে কখন কোথায় কী করা উচিত। আর্থিক ও বাণিজ্যিক সংস্কার নিয়ে চিনের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। চিনের মানুষ কী করবেন বা করবেন না, সেই নির্দেশ দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই বিশ্বের কোনও দেশই। তাই এ ব্যাপারে মাতব্বরি করা বন্ধ করুক অন্য কোনও দেশ।
[হিন্দু ধর্ম সচেতনতায় প্রচার শুরু মার্কিন মুলুকে]
উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সাল থেকে উদার অর্থনীতির পথে হাঁটতে শুরু করে চিন। যার মূল কারিগর ছিলেন দেং জিয়াও পিং। সেই উদারনীতি ও সংস্কারের ৪০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার এক বক্তৃতায় আমেরিকাকে এই হুঁশিয়ারি দেন চিনের প্রেসিডেন্ট।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে শুল্ক আরোপ করা নিয়ে সম্প্রতি চিন ও আমেরিকার মধ্যে তীব্র বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে চিনা পণ্যের উপর প্রচুর শুল্ক আরোপ করে আমেরিকা। পালটা মার্কিন পণ্যের উপর বিপুল শুল্ক আরোপ করে বেজিংও। সম্প্রতি একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চিন-মার্কিন সংঘাতের মাত্রা কমলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। যদিও চলতি মাসের গোড়াতেই ৯০ দিনের মধ্যে সে সমস্যা সমাধানে সম্মত হয়েছে দু’দেশই। সে জন্য দু’পক্ষই একে অপরের উপর শর্ত আরোপ করেছে। যা পূরণ না হলে শুল্ক নিয়ে আপস করবে না বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে আমেরিকা। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সেই প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারির প্রেক্ষিতেই এ বার এই ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়লেন শি জিনপিং।
শুল্ক যুদ্ধের স্থায়ী সমাধানের জন্য আলোচনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও রাজি হয় দু’পক্ষ। চিনের বিশাল বাজার দখল করতে দীর্ঘদিন ধরেই সে দেশে পুরোপুরি ভাবে ব্যবসা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলি। তাদের অভিযোগ, ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে চিনের মাটিতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে ওই দেশগুলির বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি। যদিও চিনের সংস্থাগুলি আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলিতে নানা ধরনের ব্যবসায়িক সুবিধা ভোগ করছে। তবে এ দিন আমেরিকার নাম উল্লেখ না করেই চিনের দাবি, কোনও দেশের কাছেই বিপজ্জনক নয় চিন। জিনপিংয়ের দাবি, যে সমস্ত ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজন বা যা করা উচিত, আমরা তা করব। তবে যে ক্ষেত্রগুলিতে সংস্কারের প্রয়োজন নেই সেখানে আমরা সংস্কারে হাত দেব না। তাতে কে কী বলল কিছু এসে যায় না।
এরপরই আমেরিকা কূটনৈতিকভাবে চিনের উপর চাপ তৈরি করে যাতে চিন নিজেদের আর্থিক সংস্কার দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং বাণিজ্য নীতি অনেকটাই বদলায়। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এমনিতেই বেজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বাণিজ্য সংঘাত চলছেই। নিত্যনতুন শুল্ক আরোপ করা ও বাণিজ্য বৈষম্য নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে সরব দুই দেশই। ফের সংস্কার নিয়ে আমেরিকা চাপ দিতেই খেপে গিয়ে চিনা প্রেসিডেন্ট জিনপিং আমেরিকার বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এই ঘটনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ জিনপিং এত কড়া ভাষায় আগে কখনও আমেরিকাকে আক্রমণ করেননি। সংস্কারের কথা বললেও, তা কোন কোন ক্ষেত্রে করা হবে, সে বিষয়ে কোনও স্পষ্ট বার্তা দেননি জিনপিং। তবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে উদার মনোভাব দেখালেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোনও রকম শিথিলতা দেখাতে রাজি নয় চিন। জিনপিংয়ের স্পষ্ট বার্তা চিনে কমিউনিস্ট পার্টির একদলীয় শাসন ব্যবস্থাই চালু থাকবে।
চলতি মাসের গোড়ায় আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে জি-২০ গোষ্ঠীর দেশগুলির বৈঠকের ফাঁকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনফিংয়ের মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানেই রফাসূত্রে সহমত হয় দু’পক্ষ। তাতে ঠিক হয়, ১ জানুয়ারি থেকে চিনা পণ্যের উপরে আমদানি শুল্ক বাড়াবে না আমেরিকা। নতুন করে শুল্কের আওতায় আনা হবে না কোনও পণ্যকে। অন্য দিকে, আমেরিকা থেকে খাদ্য, শিল্প-সহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়াবে চিনও। যাতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা যায়। এই সন্ধির মধ্যেই আমেরিকার বিরুদ্ধে জিনপিংয়ের কড়া হুঁশিয়ারি ফের সংঘাত শুরুর বার্তা দিল বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মহল।
[গুগলে ‘ভিখারি’ লিখে সার্চ করলেই আসছে ইমরান খানের ছবি]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.