সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বালোচ বিদ্রোহীদের আগুনে পুড়ছে বালোচিস্তান। যার আঁচ ছড়িয়েছে গোটা পাকিস্তানে। জাফার এক্সপ্রেস হাইজ্যাক থেকে একের পর এক হামলায় মাত্র দু’দিনে মৃত্যু হয়েছে শতাধিক পাক সেনার। বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এখন মাথাব্যথার কারণ পাক সংগঠনের। এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে এবার পাকিস্তানে সেনা মোতায়েন করতে চলছে চিন! প্রশ্ন উঠছে, শুধুই কি বন্ধুত্বের স্বার্থে এহেন চিন্তাভাবনা বেজিংয়ের? নাকি নিজের স্বার্থ রক্ষা করতেই পাকভূমে আসরে নামবে লাল ফৌজ? গোটা ঘটনাপ্রবাহের উপর নজর রাখছে ভারত।
বালোচ বিদ্রোহীরা যেমন পাক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনই তাদের টার্গেট পাকিস্তানে থাকা চিনা আধিকারিকরাও। কারণ ২০১৫ সালে স্বাক্ষর হওয়া মউয়ের ভিত্তিতে চিন-পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর বা সিপিইসি নির্মাণকার্য শুরু হয়। চিনের প্রস্তাবিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের উপর ভিত্তি করে, তাদের অর্থ সাহায্য করতেই এই করিডর তৈরি হয়। এমনটাই দাবি করে দু’দেশ। পাকিস্তানের গদর বন্দর থেকে চিনের শিনজিয়াং প্রদেশ পর্যন্ত মোট ৩,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথটি তৈরি করা হয়েছে৷ এই করিডর নিয়ে প্রথম থেকেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছেন বালোচিস্তান-সহ গিলগিট-বালতিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দারা। এই করিডর নিয়ে প্রবল আপত্তি রয়েছে ভারতেরও।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই আলাদা হওয়ার দাবি জানাচ্ছে বালোচিস্তান। ২০০০ সালের শুরুর দিকে এই প্রদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করার দাবিতে পাক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বিএলএ। তারপর থেকে পাকিস্তানি শাসনের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে লড়াই চালাচ্ছে বালোচ বিদ্রোহীরা। পালটা গুমখুন, হত্যা ও ধর্ষণের মতো অমানুষিক অত্যাচার চালিয়ে বিদ্রোহের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ। বিশেষ করে এই চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর তৈরি হওয়ার পর থেকেই আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে বালোচিস্তান। অভিযোগ, পেশিশক্তির জোরে তাদের বাসভূমি কেড়ে নিয়ে এই করিডর তৈরি করা হয়েছে। খনিজ সমৃদ্ধ প্রদেশটিকে কার্যত লুট করছে পাক প্রশাসন। আর লাভের গুর খাচ্ছে চিনও। প্রতিদানে বালোচ জনতা পাচ্ছে শুধুই নির্যাতন ও দারিদ্র। তাই বালোচ বিদ্রোহীদের নিশানায় রয়েছে চিনা আধিকারিকরা। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন চিনের বহু ইঞ্জিনিয়ার।
ফলে বালোচিস্তানের এই বর্তমান পরিস্থিতি চিন্তা ধরিয়েছে চিনের মনেও। বিশ্লেষকদের মতে, খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ বালোচিস্তান কোনওভাবেই হাতছাড়া করতে চায় না বেজিং। বালোচ বিদ্রোহীদের সামনে যদি পাক সেনা টিকতে না পারে তাহলে এতে বিপদ বাড়বে চিনেরও। ক্ষতির সম্মুখীন হবে চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডর। তাই নিজের স্বার্থেই সেনা পাঠানোর কথা ভাবছে শি জিনপিং। আর এই পরিস্থিতিতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে ভারত। আশঙ্কা, বালোচিস্তানকে হাতিয়ার করে করাচি ও গদর বন্দরে পুরোপুরিভাবে ঘাঁটি গেড়ে বসবে লাল ফৌজ। আর তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে আরও বড় ষড়যন্ত্র রচনা করতে পারে ইসলামাবাদ। তাই গোটা পরিস্থিতির উপর কড়া রাখছে ভারত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.