সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উন্নয়নের নামে ঋণের পসরা সাজিয়ে বসেছে চিন (China)। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের আওতায় পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা-সহ এশিয়ার দেশগুলিতে ‘ডেট ট্র্যাপ’ বা ঋণের জাল বিস্তার করেছে ‘ড্রাগন’। চিনের নজর পড়েছে নেপালেও। আর সেই ফাঁদে পা দিলে কী হয়, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে কলম্বো। এহেন পরিস্থিতিতে এবার লাতিন আমেরিকার দিকে হাত বাড়াচ্ছে চিন বলে খবর।
সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পটিকে আরও প্রসারিত করার লক্ষ্যে নেমে পড়েছে চিন। আর আমেরিকার উদ্বেগ বাড়িয়ে সম্প্রতি লাতিন আমেরিকার দেশগুলির সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করার দিকে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে বেজিং। ফলে ঘাড়ের কাছে ‘ড্রাগনে’র উত্তপ্ত নিশ্বাসে রীতিমতো সিঁদুরে মেঘ দেখছে ওয়াশিংটন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে চিনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পে শামিল হয়েছে ইকুয়েডর ও আর্জেন্টিনা। চিনা ঋণ নিয়ে চাপে পড়েছে ভেনেজুয়েলা। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসনারো একবার বলেছিলেন যে, “চিন ব্রাজিল থেকে পণ্য কিনছে না, বরং ব্রাজিলকেই কিনে নিচ্ছে।” ফলে, জল যে মাথা ছাড়িয়েছে তা স্পষ্ট।
গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সেনেটে বৈদেশিক সম্পর্ক সংক্রান্ত এক আলোচনায় লাতিন আমেরিকায় চিনা প্রভাব বিস্তারের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন সেনেটররা। বিরোধী হলেও এই একটি বিষয়ে সহমত ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের সদস্যরা। এই বিষয়ে ডেমোক্র্যাট সেনেটর এডওয়ার্ড মার্কি বলেন, “চিনের কাছে একটি পরিকল্পনা আছে। আমাদের কাছে নেই।” বাইডেন প্রশাসনকে তোপ দেগে রিপাবলিকান সেনেটর বিল হ্যাগারটির মন্তব্য, “আমাদের খাবার খেয়ে ফেলছে চিন।”
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। কারণ, লাতিন আমেরিকার দেশগুলির সঙ্গে চিন একের পর এক চুক্তি করে যাচ্ছে। গুণগত দিক থেকে বিচার করলে চিনা পণ্য বা পরিকাঠামো নির্মাণের পদ্ধতি আমেরিকর চেয়ে অনেক নিম্ন মানের। কিন্তু ঢালাও ঋণের আশ্বাসে বাজিমাত করছে কমিউনিস্ট দেশটি। মার্কিন প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজনৈতিক ও নিয়োগ সংক্রান্ত লালফিতের ফাঁসে এখনও লাতিন আমেরিকার সব দেশে রাষ্ট্রদূত পাঠাতেও সক্ষম হয়নি।
এদিকে, চিন ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছে আমেরিকার উদ্বেগ বাড়লেও তারা বিশেষ চিন্তিত নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেনগিউ বলেন, “লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলিকে নিজেদের উঠোন বলে মনে করে ওয়াশিংটন। তাই ওই দেশগুলির বশ্যতা তাদের প্রাপ্য বলে ধরে নিয়েছে আমেরিকা। ওই দেশগুলির উপর সব সময় চাপ তৈরি করে আমেরিকা। এবার তারা (লাতিন আমেরিকা) বুঝে নিক কে শত্রু কে মিত্র।”
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই ‘চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বেশ কয়েকটি দেশ। চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয় সে দেশে। চিনের মদতে একটি উচ্চাকাঙ্খী পরিকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করে দেয় মালয়েশিয়া সরকার। দেখা গিয়েছে, যে চিনা প্রকল্পের কোনও লাভ ঋণগ্রহীতারা পাচ্ছে না। বরং তাদের বাণিজ্যিক ঘাটতির মুখে পড়তে হচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ শ্রীলঙ্কা। দেশটির বিদেশি ঋণের পরিমাণ বিপুল আকার ধারণ করেছে। এই ঋণের অর্ধেকেরও বেশি চিন থেকে নেওয়া। গত সাত দশকে সবচেয়ে বড় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটি। বিদ্যুতের অভাবে ব্ল্যাক আউট চলছে দেশে। খাবার, ওষুধ অগ্নিমূল্য। এমনকী মিলছে না প্রতিদিনের প্রয়োজনের রান্নার গ্যাস। এহেন পরিস্থিতিতে এবার ড্রাগনের নজর পড়েছে লাতিন আমেরিকায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.