সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যুদ্ধের জন্য তৈরি হতে দেশের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) বা লাল ফৌজকে নির্দেশ দিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং৷ নির্দেশ পেয়েই চিনা মিলিটারিতে হাই অ্যালার্ট জারি হয়েছে| আমেরিকা ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে৷ হোয়াইট হাউসের সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ের যে কোনও দিন চূড়ান্ত সংঘাত বেধে যেতে পারে এই আশঙ্কাতেই যুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি সেরে ফেলতে চায় বেজিং৷
এই পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে চিন-আমেরিকা সংঘাতের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠছে। চিনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে জানা গিয়েছে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পরই উত্তর কোরিয়ার সীমান্তে প্রায় দেড় লক্ষ সশস্ত্র সেনা মোতায়েন করেছে বেজিং। আন্তর্জাতিক মঞ্চে উত্তর কোরিয়ার একমাত্র বন্ধু চিন। যদিও উত্তর কোরিয়া নিয়ে চিন-আমেরিকার মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, কিমকে পারমাণবিক পরীক্ষা থেকে বিরত রাখবে চিন। কারণ বেজিং চায় না আমেরিকার রোষে পড়ে ‘বন্ধু’ কিমের সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাক। কারণ, কোরিয় উপদ্বীপে মার্কিন ও ইউরোপীয় প্রভাব রুখতে কিমের গদিতে থাকা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করে বেজিং।
চিনা প্রেসিডেন্ট এক বার্তায় সেনাবাহিনীকে বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেনা জওয়ানদের অত্যাধুনিক যুদ্ধ কৌশল রপ্ত করতে হবে৷ এখনকার যুদ্ধ কৌশল ও প্রক্রিয়া অনেক আলাদা৷ ইলেকট্রনিক, মহাকাশ বিজ্ঞান, উপগ্রহ ব্যবস্থা নির্ভর ও তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর যুদ্ধ ব্যবস্থা করায়ত্ত করতে হবে সেনাদের৷ তবেই যুদ্ধে জেতা সম্ভব হবে৷ পাল্টে যাওয়া রণক্ষেত্রে সাফল্য পেতে হলে সড়গড় হতে হবে খুঁটিনাটি সব বিষয়ে৷ অত্যাধুনিক যুদ্ধরীতি করায়ত্ত করতে হবে সেনাদের৷
বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জিনপিং বলেন, যুদ্ধের জন্য দেশের ২৩ লক্ষ সেনাকে সবসময় সজাগ ও তৈরি থাকতে হবে৷ কারণ চিন চারদিকে শত্রুবেষ্টিত হয়ে রয়েছে৷ সামরিক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও আগ্রাসন রুখতে বন্ধু দেশ দক্ষিণ কোরিয়াতে শক্তিশালী রাডার বিশিষ্ট ‘থাড’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে আমেরিকা৷ থাড মানে, টার্মিনাল হাই অ্যাল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স৷ এটি যে কোনও ক্ষেপাণাস্ত্রের হামলা আগাম রুখে দিতে পারে৷
শুধু তাই নয়, অত্যাধুনিক এই মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র থাড গোটা চিনের ক্ষেপণাস্ত্রে মোতায়নের উপর নজরদারি করতে সক্ষম৷ নজরদারি চালাতে পারে দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের সামরিক কাজকর্মের উপরও৷ এই ঘটনায় অশনি সঙ্কেত দেখছে চিন৷ এছাড়াও চিনের সঙ্গে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐতিহাসিক বিবাদ রয়েছে তাইওয়ানের৷ জাপানের সঙ্গে সমুদ্রসীমা ও সেনকাকু দ্বীপের দখল নিয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে৷ গণতন্ত্রের প্রশ্নে হংকং-এর সঙ্গে চিনের সংঘাত রয়েছে৷ দক্ষিণ চিন সাগরে আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে চিন সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছে ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া-সহ সাতটি দেশের সঙ্গে৷ আন্তর্জাতিক আদালতে হেরে গিয়েও বেপরোয়া হয়ে সামরিক নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে বেজিং৷
অন্যদিকে, সীমান্ত সমস্যা, দলাই লামা ও পাক-চিন অর্থনৈতিক করিডর –এই তিন ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে৷ চিনের কাছে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, উত্তর কোরিয়াকে দমন করতে চিন সাগরে মার্কিন বিমানবাহী বিশাল যুদ্ধজাহাজ৷ তাই আমেরিকার থাড মিসাইল সিস্টেম ও এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারের মোকাবিলায় কোমর বাঁধছে চিনের সেনাও৷ লাল ফৌজকে যুদ্ধের জন্য তৈরি থাকতে বলেছেন প্রেসিডেন্ট জিনপিং৷ প্রতিবেশী দেশগুলির চিন বিরোধী কাজকর্মে রাশ টানতেই তাদের চাপে রাখার জন্য যুরে হুমকি জিনপিংয়ের৷ বলপ্রয়োগের এই হুমকি তিনিও আগেও দিয়েছিলেন৷ দক্ষিণ চিন সাগর, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা, জাপান ও ভিয়েতনামের সঙ্গে জলসীমা নিয়ে বিবাদে চিনের আধিপত্য বজায় রাখতেই তাঁর এই হুমকি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.