সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এমনিতেই ভারত-পাক সম্পর্ক এখন নানা টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। পুলওয়ামা হামলার ক্ষত এখনও শুকোয়নি। মাঝে মাঝেই পাক মুলুকে হিন্দু নিধন ও হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার খবর আসে। কাশ্মীর নিয়ে পাক নেতাদের হুঁশিয়ারি নিত্যদিনের ঘটনা। তাতে নতুন করে নেতিবাচক মাত্রা যোগ করল রবিবারের ঘটনা। পাকিস্তানে অবস্থিত শতাব্দী প্রাচীন সুবিশাল গুরুনানক প্যালেসে হামলা চালাল দুষ্কৃতীরা। ঐতিহাসিক গুরুদ্বারের একাধিক অংশ ভেঙে চুরি করে পালিয়েছে বলে অভিযোগ। ভারত-পাক কর্তারপুর করিডর নির্মাণের মাঝে এই ব্যতিক্রমী ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। শিখ ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি, ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের ভিড় হত এই গুরুদ্বারে।
সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী, লাহোর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নারওয়াল শহরে অবস্থিত চার তলার এই বিশাল গুরুদ্বার। প্রায় ৪০০ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল এটি। মোট ১৬টি ঘর রয়েছে এখানে। প্রত্যেকটি ঘরে আবার তিনটি করে কারুকার্য করা দরজা এবং চারটি করে ভেন্টিলেটর ছিল। শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানক-সহ বিভিন্ন হিন্দু শাসক এবং যুবরাজের ছবি টাঙানো ছিল দেওয়ালে। এখানেই রবিবার রাতে হানা দিয়েছিল একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতী। শাবল, গাঁইতি, কুড়ুল, কোদাল, তরোয়াল ছিল তাদের হাতে। প্রতি ঘরের দরজা, জানালা ভেঙে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। বিনা বাধায় রাতভর ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। মূল্যবান কাঠ দিয়ে নির্মিত ও নকশা করা এই জানলা, দরজা চোর-বাজারে বিক্রি করা হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাক সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ঘটনার সঙ্গে স্থানীয়রাই জড়িত বলে সন্দেহ পুলিশ-প্রশাসনের। যদিও স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন মদতেই এই লুঠ হয়েছে।
পাক সংবাদমাধ্যমগুলি জানিয়েছে, ঐতিহাসিক ওই গুরুদ্বারটির অনেকটাই গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা। খুলে নিয়ে গিয়েছে মূল্যবান কাঠ দিয়ে তৈরি জানলা, দরজাও। এলাকার মুসলিম ধর্মীয় স্থানগুলির সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্ব থাকে ওয়াকফ বোর্ডের হাতে। তাদের প্রচ্ছন্ন সম্মতিতেই গুরুদ্বারে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ আশলাম জানিয়েছেন, ‘পুরনো ওই বিল্ডিংটিকে ‘প্যালেস অব বাবা গুরু নানক’ বলা হয়। আমরা নাম দিয়েছি মহলান। ভারত তো বটেই, অন্য অনেক দেশ থেকেও শিখ ধর্মাবলম্বীদের আনাগোনা লেগে থাকত। কানাডা থেকে ছ’জনের একটি শিখ প্রতিনিধি দলও একবার এখানে এসে সবকিছু দেখে যান।” পাক টিভি চ্যানেল ও ওয়েবসাইটে সম্প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মহম্মদ আশরফ নামের অপর এক ব্যক্তির দাবি, ‘‘ওয়াকফ বোর্ডের সম্মতিতে প্রভাবশালীরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। বিল্ডিং ভেঙে ইতিমধ্যেই নতুন নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এতবড় একটা গুরুদ্বার ভাঙার খবর পাওয়ার পরও প্রশাসনিক ব্যক্তিরা কেউ ঘটনাস্থলে আসেননি। পুলিশ দায়সারা তদন্ত করে চলে গিয়েছে। এলাকার মানুষজন ই-মেল করে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সব জানিয়েছে।” পাক পত্রিকা ‘ডন’ জানিয়েছে, দেশভাগের সময় পাকিস্তান থেকে হিন্দু ও শিখরা ভারতে চলে এলে, তাদের ফেলে আসা সম্পত্তির তদারকির জন্য বিশেষ ইভাকুই ট্রাস্ট প্রপার্টি বোর্ড (ইটিপিবি) রয়েছে পাকিস্তানে। ঘটনার পর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু কাদের হাতে গুরুদ্বারটির পরিচালনার ভার ছিল, তার কোনও রেকর্ড মেলেনি। রাজস্ব বিভাগের কাছেও গুরুদ্বারটি সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই বলে জানান নরোয়ালের ডেপুটি কমিশনার ওয়াহিদ আসগর।
এই ঘটনার প্রতিবাদে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ মিছিল ও মৌন মিছিল বের হয় ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের বিভিন্ন শহরে। অন্যদিকে, গুরু নানক দেবের পাঁচশো বছর পূর্তি উপলক্ষে কর্তারপুর করিডর নিয়ে গঠনমূলক কিছু করা যায় কি না তা নিয়ে সোমবার আলোচনা সারলেন ভারত ও পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রকের কর্তারা। কর্তারপুর জিরো পয়েন্টে এদিন দুঘণ্টার বৈঠক হয়। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের গুরদাসপুর জেলায় অবস্থিত ডেরা বাবা নানক সৌধের সঙ্গে পাক পাঞ্জাবের কর্তারপুরের দরবার সাহিব গুরুদ্বারকে সংযুক্ত করতে পাকা সড়ক ও পরিকাঠামো নির্মাণ নিয়েই আলোচনা হয় এদিন। প্রতিকূলতা কাটিয়ে কীভাবে তা তৈরি করা যায় সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে দু’পক্ষের মধ্যে। রবিবারই পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কিছুক্ষণ সৌজন্যমূলক কথা হয়েছিল। কিন্তু তাতে যে একটা আবছা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছিল তার সুর কাটল গুরু নানক প্যালেসে ভাঙচুর করার ঘটনায়। এই ঘটনায় স্পষ্ট হল, ইমরান মুখে বললেও তঁার সরকার পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.