সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বার্সেলোনায় এমন অশান্তি দিনের পর দিন ধরে চলতে পারে না। স্পেনে স্বাধীন কাতালুনিয়ার দাবিতে প্রতিবাদকারীদের টানা ৫ দিন ধরে আন্দোলনে জ্বলন্ত পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসে এমনই কড়া বার্তা দিলেন বার্সেলোনার মেয়র। বিক্ষোভকারীদের এই পথ থেকে সরে আসার নির্দেশ দিয়ে মেয়র আদা কোলাউয়ের স্পষ্ট বার্তা, ‘এটা চলতে পারে না। বার্সেলোনার মতো শহরে এই পরিস্থিতি মানায় না।’
গোটা স্পেনের সঙ্গে সেখানকার প্রায় নিয়ন্ত্রক রাজ্য কাতালুনিয়ার ঝামেলা নতুন কিছু নয়। ইউরোপের এই দেশটির মূল নিয়ন্ত্রক কাতালুনিয়া। কী অর্থনীতি, কী সংস্কৃতি – সবেতেই স্পেনকে চালিত করে দক্ষিণাংশের এই অঞ্চল। ১৯৩৯এর গৃহযুদ্ধের পর কাতালুনিয়াকে স্পেনের অংশ হিসেবে রাখা হলেও, অতিরিক্ত ক্ষমতাপ্রদান করা হয়। কাতালুনিয়ার আলাদাভাবে বিশেষ পার্লামেন্টও তৈরি হয়। রয়েছে পৃথক পতাকাও। এখানকার বাসিন্দারা নিজেদের ‘স্পেনীয়’ বলার চেয়ে ‘কাতালান’ বলতে বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু সময় যত গড়াতে থাকে, ততই কাতালুনিয়ার ছবিটা বদলে যায়। ধীরে ধীরে বৃহত্তর অংশ হিসেবে স্পেনের মূল প্রশাসন কাতালুনিয়ার বিশেষ পার্লামেন্টের ক্ষমতা খর্ব করে দেয়। এতেই ক্ষেপে ওঠেন সেখানকার বাসিন্দারা। স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘স্বাধীন কাতালান’ রাষ্ট্রের দাবি জোরদার হয়। আজকের পরিস্থিতি তারই অংশমাত্র। আগেও একবার স্বাধীনতার জন্য গণভোট হয়েছিল এখানে। ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছিল ‘স্বাধীন কাতালান’-এর পক্ষে। কিন্তু স্পেন সরকার নিজেদের ক্ষমতাবলে তা হওয়া আটকেছে। এবারের পরিস্থিতি অবশ্য এতটাই অগ্নিগর্ভ যে তা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে স্পেন প্রশাসনের কপালে।
যেহেতু খেলা, পর্যটন-সহ একাধিক ক্ষেত্রে কাতালুনিয়াই স্পেনের অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রক, তাই তাকে সঙ্গে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্পেনের কাছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন সঙ্গে থাকার সুবাদে তাই স্পেন কাতালুনিয়ার উপর চাপ তৈরি করতে পারছে এখনও। কিন্তু অর্থনীতির দিকটি দেখলে, কাতালুনিয়া যদি সত্যিই পৃথক হয়ে যায় তাহলে স্পেনের হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়বে স্পেন। তাই ‘স্বাধীন কাতালান’-এর পক্ষে আন্দোলন দমন করা অত্যন্ত জরুরি তাদের জন্য। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’, ‘বিদ্রোহী’ বলে দেগে দেওয়া হয়েছে।
এনিয়ে পঞ্চম দিনে পড়ল কাতালুনিয়ার বিক্ষোভ। প্রতি রাতে সক্রিয়তা বাড়ছে। আর স্বাধীনতার দাবি তত প্রবল হচ্ছে। রাস্তাঘাটে রীতিমতো গুলি ছুঁড়ে,বাজি ফাটিয়ে নিজেদের দাবি প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ভয়াবহ হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। পুলিশও এই বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে বিক্ষোভকারীরা মুখোশ পরে বিক্ষোভে শামিল। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে পর্যটক এবং খ্যাতনামা ফুটবলারদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রবল চিন্তায় প্রশাসন। কাউকে হোটেলের বাইরে বেরতে না বেরনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত ফুটবল ক্লাবগুলি থেকে পর্যটন সংস্থা, সকলেই কাতালুনিয়ার সঙ্গেই থাকার পক্ষে। এই পরিস্থিতিতে মেয়রের হুঁশিয়ারি কার্যত ফাঁকা আওয়াজেই পরিণত হয়েছে। তাতে যে বিক্ষোভকারীরা কর্ণপাত করছে না, প্রতি রাতের ছবি থেকেই তা স্পষ্ট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.