সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটল ডেস্ক: কাশ্মীরের মাটিতে বড়সড় হামলার ছক কষেছিল লন্ডন ব্রিজে হামলাকারী উসমান খান। বিষয়টি সম্পর্কে ব্রিটেনের প্রশাসন সতর্কও করেছিলেন উসমানকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া সেখানকার এক বিচারপতি। ২০১০ সালের লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ বোমা বিস্ফোরণ মামলায় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত উসমানকে জেল হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। সেসময় মাত্র ১৯ বছর বয়স ছিল আল কায়েদার ভাবধারায় বিশ্বাসী উসমানের। কিন্তু, তারপরও তার কর্মকাণ্ড বিস্মিত করেছিল ওই বিচারপতিকে। যার জেরে রায় দেওয়ার সময় উসমানকে কনিষ্ঠতম জঙ্গি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। জেলে বাইরে রাখলে সমাজের ক্ষতি হবে বলে সতর্ক করেন। কিন্তু, তারপর ২০১২ সালে জেলে যাওয়া উসমানকে কেন ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সেখান থেকে ছেড়ে দেওয়া হল। সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন কেউ।
ওই বিচারপতি আরও জানিয়েছেন, উসমান খান ও তার আরেক সহযোগী নাজান হুসেন বিভিন্ন মাদ্রাসায় গিয়ে কাশ্মীর নাশকতা করার জন্য উসকানি দিত। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জন্মানো ও মাদ্রাসায় ট্রেনিং নেওয়া যুবকদের নিয়ে জঙ্গি কাজকর্ম চালানোর জন্য নিয়োগ করত। অনেককে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন জঙ্গি ঘাঁটিতে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিত। পরে প্রশিক্ষিত জঙ্গিদের ইংল্যান্ডে নিয়ে এসে নাশকতার কাজে ব্যবহার করত। কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশে নাশকতামূলক কাজ চালানোর জন্য সেখানকার একটি মাদ্রাসায় পাকাপাকিভাবে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির করার পরিকল্পনা নিয়েছিল উসমান। তার জন্য টাকাও জোগাড় করছিল। তার পরিকল্পনা ছিল কাশ্মীরের একটা বড়সড় জঙ্গিঘাঁটি বানিয়ে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানো। উসমান ও নাজানের সঙ্গে কথা বলার সময় সন্ত্রাসবাদী নাশকতার বিষয়ে ওদের মনোভাব দেখে অবাক হয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি সম্পর্কে প্রশাসনকে সর্তক করেছিলেন। কিন্তু, তা মানেনি বলেই লন্ডন ব্রিজে হামলার চালানোর সুযোগ পেয়ে যায় উসমান।
লন্ডন ব্রিজে ছুরি নিয়ে হামলা চালানোর বিষয়ে তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন যে আঞ্জেম চৌদারি নামে কুখ্যাত এক আল কায়েদা জঙ্গির সঙ্গী ছিল উসমান। ২০১০ সালে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে বিস্ফোরণের চক্রান্ত করেছিল আল কায়দার সমর্থক ন’জনের একটি দল। তার মধ্যে ছিল উসমানও। আর মাত্র ১৯ বছর বয়সেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নিজেদের জমিতে জঙ্গি শিবির তৈরির ছক কষেছিল। তাই ২০১১ সালে ইংল্যান্ড ছেড়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও করে ফেলেছিল। তবে ২০১৮ সালে জেল থেকে বেরনোর পর আল কায়দাকে ছেড়ে আইএসের পথে পা বাড়ায় সে। হয়ে যায় আইএস ‘যোদ্ধা’।
কিন্তু, তার আগেই উসমান ও তার দলকে ধরে ফেলে লন্ডন পুলিশ। এরপর সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে ২০১২ সালে অনির্দিষ্ট কালের জন্য জেল হয়ও তার। আদালত সেসময় জানিয়েছিল, অন্তত ৮ বছর জেলে থাকতে হবে উসমানকে। পরে তা নির্ভর করবে তার গতিবিধির উপরে। অর্থাৎ প্রশাসন যত দিন মনে করবে, তত দিন জেলে থাকতে হবে তাকে। কিন্তু ২০১৩ সালে সাজা কমিয়ে আদালত নির্দিষ্ট করে ১৬ বছরের কারাদণ্ড দেয় উসমানকে। কিন্তু, শর্তসাপেক্ষে গত বছর ছেড়ে দেওয়া হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.