সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে গিয়ে কার্যত লেজে-গোবরে অবস্থা ব্রিটেনের। প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র প্রস্তাব কেউ মানতে চাইছেন না। কার্যত অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এমনকী, ২৯ মার্চ সময়সীমা শেষ হলে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ বৈদেশিক, বাণিজ্য-সহ কোনও বিষয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের কোনও চুক্তি থাকবে না। এই অবস্থায় ব্রিটেনকে সামান্য স্বস্তি দিয়ে ব্রেক্সিট কার্যকর করার সময়সীমা বাড়াতে রাজি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অন্তত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করতে রাজি। আর যদি প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র ব্রেক্সিট চুক্তি ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আগামী সপ্তাহে মেনে নেয়, তাহলে সময়সীমা ২২ মে পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বারবার টেরেসা মে’র ব্রেক্সিট চুক্তি খারিজ হয়ে যাওয়ায় তিনি প্রবল চাপে। বাধ্য হয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত ব্রেক্সিট কার্যকর করা স্থগিত রাখার আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন ততদিন অপেক্ষা করতে রাজি নয়। তাদের স্পষ্ট কথা, আগামী সপ্তাহে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত চুক্তি পাস করাতে হবে। না হলে অন্তত ১২ এপ্রিলের মধ্যে গঠনমূলক পদক্ষেপ করা আবশ্যক। এর আগে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক জানান, সদস্য দেশগুলি সর্বসম্মতিক্রমে ব্রেক্সিট চুক্তি কার্যকর করার মেয়াদ বাড়াতে রাজি হয়েছে। কিন্তু মে যেখানে অন্তত তিন মাস সময়সীমা পিছোতে চাইছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রস্তাব দিচ্ছে স্বল্প সময়ের।
প্রশ্ন উঠছে, তিন বছর ধরে চলা অচলাবস্থা কি এত তাড়াতাড়ি শেষ হবে? টেরেসা মে’র যে প্রস্তাব ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দু’বার খারিজ করেছে, চুক্তিতে বিরাট কোনও পরিবর্তন না হলে সেটা কি মেনে নেবেন ব্রিটিশ এমপি-রা? ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্ব যেমন বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন, ততটাই অনিশ্চয়তায় ভুগছেন ব্রিটেনের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। এমনকী, চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের আশঙ্কায় সমন্বয় রক্ষা করতে লন্ডনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনে একটি বাঙ্কারে কমান্ড পোস্ট তৈরি করে ফেলেছে ব্রিটিশ সেনা।
এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠক শুরু হয়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দেন, ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত করা ব্রিটেনের দায়িত্ব। তা না হলে ২৯ মার্চ চুক্তিহীন ব্রেক্সিট ঘটতে চলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও তাজানি বলেন, “আমরা অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত, উদ্বিগ্ন।” ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আশা করছেন, তিন মাসের মধ্যে ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করিয়ে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন করতে পারবেন। কিন্তু পরিস্থিতি তাঁর পক্ষে ততটা অনুকূল নয়। টেরেসা মে’র বিরোধীরা নমনীয় হওয়ার বদলে আরও কঠোর অবস্থান নিচ্ছেন। বুধবার রাতে টিভিতে সম্প্রচারিত ভাষণে বিরোধীরা ‘অন্তর্দ্বন্দ্ব’ করছেন, ‘রাজনৈতিক খেলা’ খেলছেন বলে অভিযোগ করেন মে। তাঁর রক্ষণশীল দলেরই এক এমপি যা ‘বিষাক্ত ভাষণ’ বলে মন্তব্য করেছেন। অ্যানা সাবরি বলেন, “কোনও প্রধানমন্ত্রী এত অসৎ, এত বিভেদমূলক কথা বলতে পারেন, ভাবাই যায় না।” বেনজির পরিস্থিতিতে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ব্রিটেনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক সংস্থা এবং শ্রমিক সংগঠনগুলি। তাদের মত, দেশ এখন জরুরি অবস্থার সামনে। চুক্তিহীন ব্রেক্সিট এড়াতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রচেষ্টা জারি থাকবে বলে জানিয়েছে সমস্ত পক্ষই। জল শেষ পর্যন্ত কতটা গড়ায়, সেটাই দেখার।
[ক্রাইস্টচার্চ হামলাকে অস্ত্র করে জেহাদের বিষ ছড়াচ্ছে ইসলামিক স্টেট]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.