সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সবুজ বাঁচাতে গিয়ে খুন হয়ে গেলেন প্রহরী। মর্মান্তিক ঘটনা আমাজনের জঙ্গলে। কাঠপাচারকারীদের হাতে নিহত স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক সদস্য। জখম আরও একজন। পাচারকারীরা এখনও অধরা। এমনিতেই আমাজনের জঙ্গল সাফ করে কৃষিকাজ করার উদ্যোগ নেওয়ায় ব্রাজিল প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ পরিবেশপ্রেমীরা। আমাজনে দাবানলের নেপথ্যেও একে দায়ী করা হয়েছিল। তারউপরে এমন একটি ঘটনা। এ নিয়ে ব্রাজিল প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ আরও বাড়ছে।
পাওলো পাওলিনো গুয়াজাজারা। আমাজন এলাকার আদি বাসিন্দা। ব্রাজিলের মারানহাও প্রদেশের অন্তর্গত আমাজনের জঙ্গল পাহারা দেওয়ার ভার ছিল এঁর উপর। সঙ্গী ছিলেন লারসিয়া গুয়াজাজারা। ২০১২ সাল থেকে আমাজন রক্ষার স্বার্থে তৈরি হয় ‘গার্ডিয়ানস অফ দ্য ফরেস্ট’। জঙ্গলে অস্ত্র চোরাচালান, কাঠপাচার-সহ একাধিক বেআইনি কাজকর্ম রুখতে এই দল তৈরি করা হয়। সেই দলেরই সদস্য ছিলেন পাওলো ও লারসিয়া। স্থানীয় আদিবাসী রক্ষা মিশন কাউন্সিল সূত্রে খবর, পাওলোকে একাধিকবার খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাঁর পাহারার জন্য জঙ্গলে চোরাকারবারিদের অসুবিধা হচ্ছে, একথা বারবারই তারা বলছিলেন বলে দাবি মিশন কাউন্সিলের কর্তাদের। এমনকী পাওলো নিরাপত্তার আবেদনও জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কেউ কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ।
সেই হুমকিই এবার সত্যি হল। রবিবার গভীর জঙ্গলে পাহারা দিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হলেন পাওলো। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। লারসিয়াকে লক্ষ্য করেও গুলি চলে। কিন্তু তিনি সময়মতো পালিয়ে যাওয়ায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন, জখম অবস্থায় তিনি ভরতি হাসপাতালে। যে গভীর জঙ্গলে ঢুকে পাওলোকে খুন করা হয়েছে, তাতে কাজটি মারানহাও আদিবাসী এলাকার আশেপাশের বাসিন্দাদের কাজ বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। কারণ, মারানহাও মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। তাঁদের কাছে প্রকৃতি দেবীস্বরূপা। পাওলো বা লারসিয়া তার ব্যতিক্রম নন। এমনকী পাওলো নিজেই একাধিকবার ক্ষোভ উগরে জানিয়েছেন যে জঙ্গলে কাউকে কাঠ কাটার জন্য ঢুকতে দেখলে তাঁর রক্ত গরম হয়ে যায়। তিনি কোনওভাবেই জঙ্গলের ক্ষতি বরদাস্ত করতে পারেন না। পাওলোর এই দৃঢ় মনোভাবের কারণে অনেকেরই চক্ষুশূল হচ্ছিলেন।
সেই কারণে তাঁকে এমন নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে।
আমাজনের জঙ্গলে সাফ করে কৃষিকাজের উপযুক্ত করে তোলার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রাজিলের বলসোনারো সরকার এবং তারপর দাবানলে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল পুড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাজিল প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে আগেই। পরিবেশপ্রেমীদের তীব্র সমালোচনার মুখে ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট। মাসখানেক আগেও আমাজনের গভীর বনভূমিতে গুলি চালনার ঘটনা ঘটেছে, যা একেবারেই বেআইনি। এবার তো সরাসরি খুন! খেপে উঠেছেন আদিবাসীরা। ঘটনায় চাপ বাড়ছে ব্রাজিল প্রশাসনের উপর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.