সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বড়সড় ধাক্কা খেল চিনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্প৷ ভারত ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য পরাক্রমশালী দেশগুলি চিনের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করল৷ চিনা ‘ড্রিম প্রজেক্ট’কে গুরুত্ব না দিয়ে বেজিং সম্মেলনে এলেন না বহু আমন্ত্রিত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা৷
ভারতের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হবে, এই অভিযোগে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ সংক্রান্ত সম্মেলনে যোগ দেয়নি ভারত। কারণ, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ভিতর দিয়ে যাওয়া ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থমূল্যের চিন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডর (সিপিইসি) নিয়ে আপত্তি রয়েছে ভারতের। সে কারণেই বেজিংয়ে গত ১৪-১৬ মে অনুষ্ঠিত দু’দিনের সম্মেলনে যোগ দেয়নি ভারত। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ওই সম্মেলনে আমন্ত্রিত ৬৪টি দেশের মধ্যে মাত্র ২০টি দেশের শীর্ষ নেতারা এসেছিলেন৷ ৪৪টি দেশ তাদের কোনও মন্ত্রীকে পাঠিয়েছিল৷ মজার ঘটনা হল, ওই সম্মেলনে যোগ দিতে এসে ফটোসেশন করেছেন এমন ৯টি দেশের প্রতিনিধিরা মূল অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতই ছিলেন না৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, গ্রিস, পর্তুগালের রাষ্ট্রপ্রধানরা একাধিক ইস্যুতে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্পের বিরোধিতা করেছেন৷ কেউ আরও স্বচ্ছতা চেয়েছেন, কেউ আবার পরিবেশ সংক্রান্ত ইস্যুতে আপত্তি জানিয়েছেন৷ এমনকী, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও সামিটের প্রথম দিন থেকেই ওই প্রজেক্টের বিষয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন৷
ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্পের অধীনেই চিন ও পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর তৈরি করেছে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে যাওয়ায় প্রস্তাবিত চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর নিয়ে আপত্তি রয়েছে ভারতের। নয়াদিল্লির আশঙ্কা, আগামী দিনে ওই এলাকাকে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিয়েছে বেজিং। কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রকের জানিয়ে দেয়, ‘বারবার বারণ করা সত্ত্বেও চিন ও পাকিস্তান এই বৈঠক বাতিল করতে চাইনি। তাই এই সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।” ২০১৭-তেই নিজেদের বিশ্ব অর্থনীতি তথা কূটনীতির ‘সুপার পাওয়ার’-এ পরিণত করার স্বপ্ন দেখছে চিন। কিন্তু এখন চিন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডর ইস্যুতে ভারত যেভাবে ক্রমাগত বিরোধিতা করেছে তা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে সেই করিডরের পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে নিয়ে মসৃণভাবে অগ্রগতি ঘটানো সম্ভব নয়। সম্মেলন বয়কট করে ভারতও চিনকে বুঝিয়ে দিয়েছে কোনওভাবেই চিনের সঙ্গে আপোস করতে রাজি নয়।
কী এই ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগ? চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘ব্রেন চাইল্ড’ এই ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্প। এই মেগা প্রজেক্টের আওতায় চিন চায় ৬০টি দেশের সঙ্গে তাদের মূল ভূখণ্ডকে যুক্ত করতে। প্রকল্পটির মূল অংশ দু’টি। প্রথমটি হল, সড়কপথে মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে চিনকে যুক্ত করা। চিনা সড়কপথের সঙ্গে রেলপথ ও তেলের পাইপলাইনও যুক্ত করা হবে। দ্বিতীয়টি, উপকূলবর্তী সিল্ক রোড, যা “টোয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি মেরিটাইম সিল্ক রোড” নামেও পরিচিত৷ এর অধীনে সমুদ্রপথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে জুড়বে চিন। প্রাচীন সিল্ক রুটের আধুনিক সংস্করণ এটি। মূল সিল্ক রোডের অস্তিত্ব ছিল আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে, যা বাণিজ্যের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ। এর মধ্য দিয়ে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিনিময় হয়েছে। চিনের নতুন ‘সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট’ ও ‘টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি মেরিটাইম সিল্ক রোড’ও ওই একই কাজ করবে। উন্নততর পরিকাঠামো নির্মাণের মধ্য দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংস্কৃতি ও চিন্তার প্রসার হবে, ফলে সবারই অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি হবে বলে বারবার দাবি করছে চিন।
তবে ভারত মনে করে, ইকোনমিক করিডরের আড়ালে পাকিস্তানে থাবা বসানোর চেষ্টা করছে চিন। পাকিস্তানেরই সংবাদপত্র ‘দ্য ডন’ ফাঁস করে দিয়েছে, ইকোনমিক করিডরের দু’ধারের হাজার হাজার একর কৃষিজমি তুলে দেওয়া হবে চিনের হাতে। সেখানে চিনা সংস্থাগুলি বিজ্ঞানসম্মত কৃষি গবেষণা চালাবে। পেশোয়ার ও করাচি শহরে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি ও ভিডিও রেকর্ডিং ব্যবস্থা চালু করবে চিন। পাকিস্তান জুড়ে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের জাল ছড়িয়ে ইন্টারনেট ও কেবল টিভি পরিষেবা দেওয়া হবে। চিনের সংস্কৃতি সম্প্রচারে বাধ্য থাকবে পাক টেলিভিশন চ্যানেলগুলি। পাশাপাশি, পাক বন্দরে ঘাঁটি গড়বে চিনা সাবমেরিন৷ ভারতে হামলা চালাতে একটুও দেরি হবে না সেক্ষেত্রে৷ তাই ভারত গোড়া থেকেই এই প্রকল্পের বিরোধী৷ এবার ভারত পাশে পেল অন্যান্য দেশগুলিকেও৷ যার ফলে চিনের এই মেগা প্রজেক্টের উপর বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠে গেল বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.