ছবি- রয়টার্স
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বারুদের পোড়া গন্ধ, বোমা-রকেটের কান ফাটানো আওয়াজের মধ্যে ক্রিসমাসের আনন্দ গায়ে মাখার উপায় নেই ইউক্রেনের। উৎসবের দিনেও নিস্তার নেই রাশিয়ার হাত থেকে। বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির শহরে ভয়ংকর হামলা চালিয়েছে রুশ ফৌজ! আঘাত হানা হয়েছে একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্রেও। এই হামলায় বহু মৃত্যুর আশঙ্কা করছে প্রশাসন। বড়দিনেও রক্তাক্ত ইউক্রেনের একাধিক শহর। কান্নার আওয়াজে ভারী বাতাস।
রয়টার্স সূত্রে খবর, এদিন সব মিলিয়ে প্রায় ৭০টি মিসাইল ও শতাধিক ড্রোন দিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্রে কার্যত ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে রুশ ফৌজ। আক্রমণের হাত থেকে বাদ যায়নি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির শহর ক্রিভি রিহ। সেখানেও বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিন এই হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন জেলেনস্কি। ক্ষোভ উগরে এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, ‘সময় ও তারিখ দেখে রাশিয়া বড় বড় হামলা চালায়। আজ পুতিন ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণের জন্য ক্রিসমাসকে বেছে নিয়েছেন। এর চেয়ে অমানবিক আর কী হতে পারে? ব্যালিস্টিক-সহ ৭০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং শতাধিক ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। যার মধ্যে ৫০টিকে আমরা আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছি। ইউক্রেনে অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখার জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে আঘাত হানা হয়েছে।’
Every massive Russian strike requires time for preparation. It is never a spontaneous decision. It is a deliberate choice – not only of targets but also of timing and date.
Today, Putin deliberately chose Christmas for an attack. What could be more inhumane? Over 70 missiles,… pic.twitter.com/GMD8rTomoX
— Volodymyr Zelenskyy / Володимир Зеленський (@ZelenskyyUa) December 25, 2024
এদিকে, রাশিয়ার হামলার কড়া নিন্দা জানিয়ে ইউক্রেনের হিউম্যান রাইটস অম্বুডসম্যান দিমিত্রো লুবিনেট টেলিগ্রামে লেখেন, ‘যখন বিশ্বের অন্যান্য দেশ ক্রিসমাস উদযাপন করছে তখন ইউক্রেনীয়রা অবিরাম রুশ হামলার শিকার হচ্ছে।’ বলে রাখা ভালো, এর আগেও ক্রিভি রিহতে হামলা করেছে মস্কো। এই শহর জেলেনস্কির জন্মস্থান। এইখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা। জানা গিয়েছে, বুধবার সকাল থেকেই ক্রিভি রিহ-সহ একাধিক শহরে সাইরেন বাজতে শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হয়ে যায় ইউক্রেনের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমগুলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই কৃষ্ণসাগর থেকে মিসাইল ছুঁড়তে করে রুশ বাহিনী।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনের প্রবল শীতই এখন হাতিয়ার রাশিয়ার।বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে এমন জায়গাতেই বেছে বেছে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে রুশ ফৌজ। গত নভেম্বরেই অন্ধকারে ডুবে ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ এলাকা। বন্ধ হয়ে যায় পানীয় জলের লাইনও। কনকনে ঠান্ডায় সমস্যায় পড়েন লক্ষ লক্ষ মানুষ। বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধে রাশিয়ার অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে শীত। এখন কিয়েভে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে। ফলে ঘর গরম রাখতে ও জলের পাইপগুলিকে সচল রাখতে বিদ্যুতের প্রয়োজন। সেই দুর্বল জায়গাতেই আঘাত করছে রাশিয়া। ফলে ইউক্রেনের লক্ষ লক্ষ নাগরিক বিদ্যুৎ সঙ্কটের মুখে পড়ছেন। এভাবে জনতার মনোবল ভাঙতে চাইছে পুতিন বাহিনী। শুধু তাই নয়, ঠান্ডায় ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ঘিরে ফেলার একটি পরিকল্পনাও করছে রুশ সেনা। এনিয়ে জেলেনস্কিকে সতর্ক করে অনেকেই বলছে, ঠান্ডার জেরেই নেপোলিয়নকে রাশিয়ার সঙ্গে লড়াই হারতে হয়েছিল। একইভাবে ‘জেনারেল উইন্টার’-এর দাপটে বিপর্যস্ত হয়েছিল নাৎসি বাহিনী। তাই শীতের মরশুমে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.