সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের পর থেকে তলানিতে ঠেকেছে ভারত-কানাডা সম্পর্ক। নিজ্জরের খুন নিয়ে ভারতকে একের পর এক তোপ দেগেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। দেশ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় কূটনীতিকদের। পালটা দিয়ে নয়াদিল্লিও কড়া বার্তা দিয়েছে যে, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভারতের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন ট্রুডো। এই আবহে ভারতের হয়ে মুখ খুলেছেন কানাডার এক সাংবাদিক ড্যানিয়েল বর্ডম্যান। ট্রুডোর মিথ্যাচারে ভারতেরই বড় জয় দেখছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি এও মনে করেন যে, এই ধরনের কাজকর্মেই নিজের পতন ডেকে আনছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী।
গত বছরের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ-কলম্বিয়ার সুরে শহরে একটি গুরুদ্বারের কাছে কুখ্যাত খলিস্তানি নেতা নিজ্জরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তদন্ত নামে কানাডার পুলিশ। তার পর পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে নিজ্জরের খুন নিয়ে সরাসরি ভারতকে আক্রমণ করেন ট্রুডো। আঙুল তোলেন দিল্লির দিকে। এর পর থেকেই ফাটল চওড়া হয় দুদেশের মধ্যে। এর মাঝেই কয়েকদিন আগে কানাডা সরকারের তদন্তকারী সংস্থা ভারতীয় হাই কমিশনার সঞ্জয়কুমার বর্মা এবং কানাডায় নিযুক্ত আরও কয়েকজন কূটনীতিকের নাম জড়ায় নিজ্জর হত্যা মামলায়। সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাঁদের কানাডা ছাড়ার নির্দেশ দেয় ট্রুডোর সরকার। যা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রুডো স্বীকার করে নেন, “আমাদের কাছে গোয়েন্দা সূত্রে খবর ছিল। ভারতের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত পোক্ত প্রমাণ আমরা পাইনি। সবটাই তদন্তের পর্যায় রয়েছে।” এর পরই কানাডার প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচার নিয়ে সরব হয় দিল্লি। প্রশ্ন উঠছে, এতদিন জোর গলায় ট্রুডো বলছিলেন নিজ্জর খুনে ভারত দায়ী। মামলায় নাম জড়িয়ে দেশ থেকে বের করে দিলেন ভারতীয় কূটনীতিকদের। এখন কীভাবে তিনি বলছেন পোক্ত প্রমাণ নেই?
এএনআই সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতিতে ট্রুডোর খলিস্তানপ্রীতি ও ভারত নিয়ে এক ভিডিও বার্তা দেন কানাডিয়ান সাংবাদিক বর্ডম্যান। তিনি বলেন, “এটা আসলে ভারতেরই বড় জয়। এখানে কানাডার আর কী বলার থাকতে পারে। পোক্ত প্রমাণ নেই অথচ দেশ থেকে ভারতীয় কূটনীতিকদের তাড়িয়ে দেওয়া হল। এগুলো কি শুধুমাত্র প্রচারের জন্য?” বছরের নানা সময়ে খলিস্তানিদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শামিল হতে দেখা যায় ট্রুডোকে। যা তাঁর খলিস্তানপ্রীতি বড় উদাহরণ। এনিয়ে বর্ডম্যান বলেন, “ট্রুডো বলেন একরকম করেন একরকম। কথার সঙ্গে কাজের কোনও মিল নেই। তিনি খলিস্তানিদের চরমপন্থার বিরোধিতা করার দাবি করেন। অথচ তিনিই আবার খলিস্তানিদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।”
#WATCH | Toronto, Canada: On India’s statement reacting to Canadian PM Justin Trudeau’s statement, Canadian Journalist Daniel Bordman says, “That’s a very good statement to hear if you’re a Canadian because the signalling there is that the relationships while Justin Trudeau is… https://t.co/3lFDBAxDSx pic.twitter.com/2KvMHlZyek
— ANI (@ANI) October 17, 2024
আগামী বছর কানাডায় নির্বাচন। কিন্তু দুর্নীতি-সহ একাধিক কারণে ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টির উপর অসন্তুষ্ট কানাডার মানুষজন। ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন ট্রুডো। কানাডার গ্লোবাল নিউজ রিপোর্টের সমীক্ষা বলছে, বর্তমানে বিরোধী দলনেতা কনজারভেটিভ দলের পিয়ের পোয়লিভ্রকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চাইছেন অধিকাংশ মানুষ। রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে ট্রুডোকে সমর্থন করেন ৩০ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে, পোয়লিভ্রের পক্ষে রয়েছেন ৪০ শতাংশ মানুষ। যা নিয়ে বর্ডম্যানের বক্তব্য, “ট্রুডোর এই মিথ্যাচারই তাঁকে গদিচ্যুত করবে। এমনিতেই নানা কারণে তিনি জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন। এর জন্যই ভারত-কানাডা সম্পর্ক আজ তলানিতে ঠেকেছে।” প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে ট্রুডোর সরকার সংখ্যালঘু। খলিস্তানপন্থী সাংসদ জগমিত সিংয়ের নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গত সেপ্টেম্বর মাসে সমর্থন প্রতাহার করে নেয়। ফলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবার ট্রুডো গদিচ্যুত হওয়া সময়ের অপেক্ষা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.