সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ পদে বসতে চলেছেন এক বাঙালি। শুধু তাই নয়, তিনি খোদ কলকাতার ছেলে। রবিবার আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ যে খবর প্রকাশ করেছে, সেখানেই জানা গিয়েছে এই বাঙালি সন্তানের বিপ্লবের কথা। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ’ (এনআইএইচ)-এর নতুন অধিকর্তা হতে পারেন কলকাতার জয় ভট্টাচার্য।
আগামী ২০ জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেবেন ট্রাম্প। এখন চলছে ঘর গোছানোর কাজ। তাঁর প্রশাসনে কে, কোন দায়িত্বে থাকবেন, সেই পরিকল্পনা এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই মতোই এ বার ট্রাম্প ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এনআইএইচ-এর অধিকর্তা পদে জয়কে বসানোর ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। যদিও কোনও পক্ষই এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ (এনআইএইচ) আমেরিকার প্রধান স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা। এই প্রতিষ্ঠান নতুন ওষুধ, চিকিৎসা পদ্ধতি এবং স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু। এনআইএইচ-এর অধিকর্তা হিসেবে এমডি ডিগ্রিধারী জয় ভট্টাচার্য নিয়োগ পেলে এটি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, বরং ভারতীয় তথা বাঙালির কাছেও গর্বের বিষয়। ছাপ্পান্ন বছর বয়সি স্বাস্থ্যবিদ এবং অর্থনীতিক জয়ের জন্ম কলকাতাতেই। বর্তমানে তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমেরিকার ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকনমিক রিসার্চের সঙ্গে যুক্ত। রয়েছে এমডি ডিগ্রি। পাশাপাশি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি পিএইচডি করেছেন তিনি।
কলকাতার সন্তান জয় ভট্টাচার্যের সাফল্য শুধু আমেরিকাতেই সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর কাজ বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলেছে। সম্প্রতি গুঞ্জন ছড়িয়েছে আমেরিকার ‘ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস’ পরিচালনা করার জন্য আগে রবার্ট এফ কেনেডিকে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। এই বিভাগের অধীনেই রয়েছে এনআইএইচ। চলতি সপ্তাহে কেনেডির সঙ্গে দেখা করেন জয়। যদিও দু’জনের বৈঠকে কী কথা হয়েছে, তা প্রকাশ্যে আসেনি। জয় কিংবা কেনেডির মুখপাত্র কেউই এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। মার্কিন প্রশাসন সূত্রের খবর, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনীতি নিয়ে তাঁর নীতিগুলি বহু মতের জন্ম দিয়েছে। জয় ভট্টাচার্যের মতো একজন দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব এই নীতিগুলিতে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করতে পারেন। তাই স্বাস্থ্য বিষয়ক এনআইএইচ-এর মতো প্রতিষ্ঠানে তাঁর নেতৃত্ব স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ জানিয়েছে, আগামী দিনে এনআইএইচ কোন পথে চলা দরকার, সে বিষয় জয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কেনেডির। জয়ের বক্তব্য সেই বিষয়ে প্রভাব ফেলেছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও সিদ্ধান্তও এখনও নেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত কাকে কোন পদের জন্য বেছে নেওয়া হবে তা ঘোষণা করবেন ট্রাম্পই। প্রসঙ্গত, বর্তমানে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকনমিক রিসার্চের সঙ্গে যুক্ত জয় এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবরে ‘গ্রেট ব্যারিংটন ডিক্লেয়ারেশন’ নামে একটি খোলা চিঠিতে সহ-লেখক হিসেবে ছিলেন। ওই খোলা চিঠিতে করোনা মোকাবিলায় মার্কিন সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেন। তাঁর মতামতকে সমর্থনও জানায় ট্রাম্পের রিপাবলিকান দল। কিন্তু সেই সময় এনআইএইচ-এর অধিকর্তা ফ্রান্সিস এস কলিনস জয়ের প্রস্তাব মানতে চাননি।
আমেরিকার স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এনআইএইচ। সে দেশে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য বিভিন্ন গবেষককে আর্থিক সহায়তা দেয় এই প্রতিষ্ঠান। আর স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় কমানো, উন্নত চিকিৎসা নীতি প্রণয়ন এবং জনস্বাস্থ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তাঁর অবদানের কথা মাথায় রেখেই সেই প্রতিষ্ঠানেই শীর্ষ পদে বসতে চলেছেন ট্রাম্পের নেকনজরে থাকা এই বঙ্গ সন্তান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.