সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ব্যাসিলাস ক্যালমেট-গুয়েরিন (বিসিজি) টিকা হল প্রধানত যক্ষ্মার (টিবি) বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। যে সব দেশে যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাব আছে, সেখানে সুস্থ শিশুদের জন্মের সময়ের যতটা সম্ভব কাছাকাছি একটি ডোজ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এবার করোনা রুখতে এই বিসিজি নিয়ে আশার আলো শোনালেন বিজ্ঞানীরা। আমেরিকায় হওয়া একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, বিসিজি প্রতিষেধক করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর গতি অনেকটাই কমিয়ে দেয়। অন্তত টিকাকরণের প্রথম ৩০ দিনে বিসিজি খুবই কার্যকর।
করোনা সংক্রমণের জেরে গোটা বিশ্বেই হাহাকার শুরু হয়েছে। দ্রুত ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টায় আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছে বহু দেশ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ নির্মাতা সংস্থাও। তার মধ্যে এই দাবিতে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। অলাভজনক সংস্থা আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ইর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স-এর জার্নালে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, কয়েক দশক আগে আমেরিকা সরকার যদি বিসিজি টিকাকরণ বাধ্যতামূলক করত, তাহলে সেখানে করোনার জেরে এত মানুষের মৃত্যু ঘটত না। উল্লেখ্য, করোনায় সবচেয়ে সংক্রমণ ঘটেছে আমেরিকায়। শুধু তাই নয়, সেখানে মৃত্যুহারও অনেক বেশি। যে দেশগুলিতে বিসিজি টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সেই দেশগুলিতে করোনা হানা দেওয়ার পর অন্তত প্রথম তিরিশ দিন সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার কম থাকে বলে গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে। তাদের মতে, বিসিজি ভ্যাকসিন শুধু যক্ষ্মা নয়, অন্য সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। কোভিড-১৯ তার মধ্যে অন্যতম। চিন এবং ভারতের মতো দেশে বিসিজি টিকা প্রয়োগকে সরকারি কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এই দেশগুলিতে মৃত্যুহারও তুলনামূলকভাবে কম।
চিকিৎসকদের একাংশেরও দাবি, এই দেশগুলিতে বিসিজি টিকাই মানুষকে করোনার প্রাণঘাতী ছোবল থেকে রক্ষা করছে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রথম ৩০ দিনে ১৩৫টি দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা এবং ১৩৪টি দেশে দৈনিক মৃতের সংখ্যার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে। তঁাদের মতে, বিসিজি নেওয়া থাকলে সংক্রমণের গতি অনেকটাই শ্লথ হয়ে যায়। তবে বিসিজি টিকাকে ‘ম্যাজিক বুলেট’ বলে মনে করছেন না তঁারা। এই মুহূর্তে প্রায় ১০০টি করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ চলছে। যেগুলি ট্রায়ালের নানা স্তরে রয়েছে। তার মধে্য ভারতেই কাজ চলছে ১৬টি ভ্যাকসিন নিয়ে। তার মধে্য বিসিজি ভ্যাকসিন তৃতীয় পর্যায়ে, জাইডাস ক্যাডিলার ভ্যাকসিন এক এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ও চারটি ভ্যাকসিন প্রি-ক্লিনিক্যাল ও প্রাথমিক স্তরে রয়েছে।
করোনার (Corona) বিরুদ্ধেও বিসিজি প্রতিষেধক কার্যকরী কি না, এই নিয়ে গত ৮ মাসে কম চর্চা হয়নি। ইন্ডিয়ান কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস-এর ডিন শশাঙ্ক যোশী একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিসিজি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ এবং করোনার সংক্রমণকে দমিয়ে রাখতেও এর ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়।” উদাহরণ হিসেবে ওই চিকিৎসক পর্তুগালের কথা বলেছেন। কারণ পর্তুগালে বিসিজি টিকা বাধ্যতামূলক। প্রতিবেশী দেশ স্পেনে করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সফল হয়েছে পর্তুগাল। করোনা আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থার অবনতি রুখতে তাঁদের শরীরে বিসিজি প্রতিষেধক পুনরায় প্রয়োগ করা যায় কি না, সেটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্রে ২৫০ জন করোনা আক্রান্তের উপরে এই টিকা প্রয়োগ করে মৃত্যু হার কমে কি না, তার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। ছয় রাজ্যে এ বিষয়ে পরীক্ষায় নেমেছে আইসিআমআর (ICMR)।
(এই গবেষণার সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন।)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.