সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ব্যাংকক নামটি কানে আসার সঙ্গেসঙ্গে চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুদৃশ্য শহরের প্রতিচ্ছবি। সমুদ্রের অবাধ্য জলরাশি সর্বদা যে শহরের পা ধুয়ে দিচ্ছে। চোখ জুড়ানো সমুদ্র সৈকত বারবার ভ্রমণপিপাসুদের টেনে নিয়ে গিয়েছে থাইল্যান্ডের রাজধানী শহরে। পর্যটন ব্যবসায় এগিয়ে থাকা শহরটিকে সুন্দর করতে কী নাই তৈরি হয়নি। স্কাই স্ক্যাপার থেকে শুরু করে বিনোদনের হরেক পসরা। ব্যাংককে বেড়াতে গিয়ে ক্যাসিনোয় যান না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ছবির মতো সুন্দর শহর ব্যাংককও কিন্তু ভয়ের প্রহর গুনছে। সেই ভয়ের নাম গ্লোবাল ওয়ার্মিং। এখনও যদি পরিবেশ সচেতনতায় জোর দেওয়া না হয় তবে আগামী একদশকের মধ্যে ডুবে যেতে পারে সৈকতবিলাসীদের সাধের শহর ব্যাংকক-সহ থাইল্যান্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে চলতি বছরের শেষেই পোল্যান্ডে বসতে চলেছে কনফারেন্স। রাষ্ট্রসংঘের ব্যবস্থাপনায় সেখানেই ব্যাংককের প্রাকৃতিক ভাগ্য নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হবে। পর্যটকদের উপবন হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে ব্যাংকক শহরটি এখন চূড়ান্ত বিপদ সীমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। সমুদ্রের জলস্তর থেকে মাত্র পাঁচ মিটার উঁচুতে থাকা শহরটিতে শুধু বিপদের হাতছানি। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জেরে যে কোনওদিন ডুবতে পারে সাধের ব্যাংকক। এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞদের। এমনিতেই বৃষ্টি হলে শহরের বিস্তীর্ণ অংশ জলের তলায় চলে যায়। গত কয়েকবছরে শহরের বিভিন্ন অংশে এতটাই জল জমতে শুরু করেছে যে যান চলাচলেও নিয়্ন্ত্রণ আনা হয়েছে। দূষণ কমাতে ক্যানেল তৈরি করে চলছে বাজারহাট। ক্যানেলের জলে বজরা ভাসিয়ে চলছে বিকিকিনি। এই ছবি দেখে অনেকেই ব্যাংককে পূর্বের ভেনিস হিসেবে তুলনাও করেছেন। সৌন্দর্যের তুলনার আড়ালে কিন্তু ভয়ের ব্যাপ্তি বেড়েই চলেছে। দূষণের মাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিপদ।
শহরের বেশিরভাগ অংশ ডুবছে। ২০৩০-এর মধ্যে শহরের ৪০ শতাংশ জলের তলায় চলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদি বড়মাপের কোনও সুনামি বা জলোচ্ছাস হয় তাহলে তো কথাই নেই। বিপর্যয় বাড়বে পাল্লা দিয়ে। প্রকৃতির ভয়াবহতাকে রুখতে তৎপর সেদেশের সরকার। তাই ২,৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক খাল কেটে পাম্পিং স্টেশনের সঙ্গে জোড়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তার সঙ্গে আটটি সুড়ঙ্গের যোগ থাকবে। ব্যাংকক প্লাবিত হলেই কাজ শুরু করবে পাম্পিং স্টেশন। সুড়ঙ্গ দিয়ে জল বের করে দেওয়া হবে।
দিনের বেলায় সৈকতে বিকিনি সুন্দরীদের ভিড়। রাত বাড়লেই ক্যাসিনোর মোহময়ী আলো মন টানবে। তবে প্রযুক্তির বিনিময়ে আসা সৌন্দর্যে মিশে থাকে বিষ বাতাস। তাই পর্যটক টানতে শহরকে বারবার কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে ব্যাংককের শরীরে লেপটে গিয়েছে প্লাবনের আশঙ্কা। অকাল বিপর্যয়ে কাঁপছে ব্যাংকক। এখনই সচেতন না হলে স্বজন হারানোর কান্নায় ঢাকতে পারে প্রিয় সৈকতভূমি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.