সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের ট্রেন অপহরণের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় বিশ্বে। তুমুল লড়াই শেষে বালোচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) বিদ্রোহীদের হাত থেকে পণবন্দিদের উদ্ধার করে পাক সেনা। কিন্তু এখনও দু’পক্ষের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি বজায় রয়েছে। পাক সেনার দাবি, সংঘর্ষে তাদের ২৩ জন জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু পালটা বালোচ বিদ্রোহীদের দাবি, একগুঁয়েমির জন্য ২১৪ জন পণবন্দিকে সেনাকে খুন করা হয়েছে।
গত ১১ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) বালোচিস্তান প্রদেশের কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পেশোয়ারে যাচ্ছিল যাত্রীবাহী জাফার এক্সপ্রেস। পাক সেনাকর্মী থেকে শুরু করে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ও নিরাপত্তা বাহিনীর অনেকেই ছিলেন ওই ট্রেনে। সকাল ৯টা নাগাদ কোয়েটা থেকে ছাড়ে ট্রেনটি। এরপর দুপুর নাগাদ প্রায় ৫০০ যাত্রী-সহ এই ট্রেনের দখল নেয় বালোচ বিদ্রোহীরা। তাদের দাবি ছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে পণবন্দিদের খুন করা হবে। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই গতকাল বুধবার পণবন্দিদের সকলকে উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে খতম হয় ট্রেনের দখল নেওয়া ৩৩ জন বিদ্রোহীও।
এরপর পাকিস্তানের সেনা বিবৃতি দিয়ে জানায়, বুধবারের অভিযানে ৩৩ জন বালোচ বিদ্রোহী নিকেশ হয়েছে। তিন রেল আধিকারিক, পাঁচ যাত্রী-সহ ২৩ জন সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু এই দাবি নাকচ করে পালটা বিবৃতি দিয়ে বিএলএ জানায়, ‘আমরা পাকিস্তানকে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা কথা কানে নেয়নি। পাক সেনা পণবন্দিদের উদ্ধারের চেষ্টা করলেও লড়াইয়ে হেরে গিয়েছে। আমিরা ২১৪ জন পণবন্দি সেনাকে মেরে ফেলেছি। একগুঁয়েমির কারণেই ওরা প্রাণ হারিয়েছে।’ এমনকী যে বিদ্রোহীরা নিহত হয়েছেন তাদের পূর্ণ মর্যাদায় শেষকৃত্য করার দাবি জানিয়েছে বিএলএ।
এর আগে পাক সরকারকে তোপ দেগে বৃহস্পতিবার বালোচিস্তানের মানবাধিকার কাউন্সিলের তথ্য সচিব কুরশিদ আহমেদ বলেন, “এই ট্রেন হাইজ্যাকই প্রমাণ যে পাকিস্তান কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু বালোচিস্তানে আরও শক্তশালী হয়ে উঠেছে বালোচ স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। ওই উত্তেজনার পরিস্থিতিতেও সংগ্রামীরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেননি। তাঁরা মহিলা ও বয়স্ক মানুষদের ও অন্যান্য পরিবারকে কোয়েটায় ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। বালোচিস্তানের বহু মানুষকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মুক্তির দাবিতেই বহু সেনা আধিকারিককে পণবন্দি বানিয়েছিলেন সংগ্রামীরা। মূলত বালোচ লিবারেশন আর্মির সংগ্রামীরা বালোচিস্তানের পাক-চিন প্রকল্পগুলোর হামলা চালায়। কিন্তু তাঁরা নিজেদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য করে। এই পরিস্থিতিতে বালোচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য ভারত ও পশ্চিমী শক্তিগুলোর সহযোগিতা করা উচিত।”
প্রসঙ্গত, এই জাফার এক্সপ্রেসই প্রথম নয়, অতীতেও বহুবার বড়সড় হামলা চালিয়ে পাকিস্তানকে রক্তাক্ত করেছে এই বালোচ বিদ্রোহীরা। পাকিস্তানের সব থেকে বড় প্রদেশ বালোচিস্তান। এখানেই জন্ম বালোচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ)। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই আলাদা হওয়ার দাবি জানিয়েছে বালোচিস্তান। ২০০০ সালের শুরুর দিকে এই প্রদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করার দাবিতে পাক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বিএলএ। তারপর থেকে পাকিস্তানি শাসনের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে লড়াই চালাচ্ছে বালোচ বিদ্রোহীরা। পালটা গুমখুন, হত্যা ও ধর্ষণের মতো অমানুষিক অত্যাচার চালিয়ে বিদ্রোহের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ। বিশেষ করে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর তৈরি হওয়ার পর থেকেই আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে বালোচিস্তান। অভিযোগ, খনিজ সমৃদ্ধ প্রদেশটিকে কার্যত লুট করছে পাক প্রশাসন। প্রতিদানে বালোচ জনতা পাচ্ছে শুধুই নির্যাতন ও দারিদ্র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.