সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তান (Afghanistan) নতুন করে দখল করেছিল তালিবান (Taliban)। তারপর থেকেই সেদেশের উপরে নেমে আসে আতঙ্কের ছায়া। দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায়। সেই সময়ই ২ মাসের এক শিশু তার বাবা-মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অবশেষে এতদিন পরে খোঁজ মিলল ছোট্ট সোহেল আহমাদির। পাঁচ মাস পরে শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার পরিবারের কাছে।
রয়টার্স সূত্রে জানা যাচ্ছে, শিশুটির বাবা মির্জা আলি আহমাদি কাবুলে মার্কিন দূতাবাসের প্রহরী হিসেবে কাজ করতেন। ফলে দেশজুড়ে অসহিষ্ণুতার আবহে আমেরিকায় পাড়ি দেওয়া তাঁর পক্ষে কঠিন ছিল না। ১৯ আগস্ট স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তিনি বিমানবন্দরে যান। কিন্তু সেখানকার বিশৃঙ্খল ভিড় ও হইচইয়ের কারণে তাঁরা ভয় পাচ্ছিলেন যদি শিশুসন্তানকে নিয়ে ভিতরে ঢুকতে না পারেন।
এই পরিস্থিতিতে বিমানবন্দরের দেওয়ালের কাছে এক মার্কিন সেনার হাতে নিজের ছেলেকে তুলে দেন মির্জা। কিন্তু এরপরই তালিবানের ভিড় কমানোর চেষ্টায় বিশৃঙ্খলা বাড়ে। ক্রমে শিশুপুত্রকে হারিয়ে ফেলেন ওই দম্পতি। কোনও খোঁজই পাননি। মির্জা ও তাঁর স্ত্রী বাকি চার সন্তানকে নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি দেন।
ছোট্ট সোহেলকে উদ্ধার করেছিলেন এক আফগান ট্যাক্সি চালক। এই ক’মাস তাঁর কাছেই পরম স্নেহে বড় হচ্ছিল সে। গত নভেম্বরে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই ট্যাক্সি চালক তাঁর আশ্রয়ে থাকা শিশুটির সম্পর্কে জানান। এদিকে ফেসবুকে শিশুটির ছবিও পোস্ট করে দেন তিনি। ক্রমে শিশুটির পরিবার জানতে পারে তাঁদের একরত্তি পুত্র কোথায় আছে।
তবে সোহেলকে ফিরিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না ওই ট্যাক্সি চালক। তাঁর ইচ্ছা তাঁদের পরিবারেরই একজন হয়ে বড় হোক এই শিশু। শেষ পর্যন্ত তালিবান পুলিশের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মেটে। আফগানিস্তানে থাকা সোহেলের দাদুর কাছে আপাতত তুলে দেওয়া হয়েছে তাকে। সোহেলের পরিবারের তরফে ৫ মাস তাঁদের সন্তানের দেখভাল করার জন্য ১ লক্ষ আফগানি টাকাও দেওয়া হয়েছে ওই ট্যাক্সি চালককে। তবুও শেষ পর্যন্ত সোহেলকে কাছছাড়া করার সময় কেঁদে ফেলতে দেখা যায় তাঁকে। সোহেল আপাতত অপেক্ষায়, কবে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে ফের বাবা ও মায়ের কোলে ফিরে যাবে সে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.