সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বেঁচেছিলেন বটে, তবে সে বাঁচা অর্থহীন! হাঁটচলা অসম্ভব। খেতে গেলেই অসুস্থ বোধ করতেন। সঙ্গে গোটা শরীরে নরকযন্ত্রণা। গত কয়েক বছর হাসপাতালে শয্যাশায়ী। বিছানাই পৃথিবী। কাব্যে নয়, বাস্তব জীবনে অস্ট্রেলিয়ার (Australia) ২৩ বছরের লিলি প্রশ্ন তোলেন, “আমায় তুই আনলি কেন, ফিরিয়ে নে।” ফিরেই গেলেন, না ফেরার দেশে। যাবতীয় যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পেতে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছিলেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সেই আবেদন মঞ্জুর করে অস্ট্রেলিয়া সরকার। বুধবার তরুণীর ইচ্ছা অনুযায়ী নিষ্কৃতিমৃত্যু দেওয়া হয়েছে লিলিকে। ১০ সেকেন্ডেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
১৭ বছর বয়সে ইলার্স ড্যানলোস সিনড্রোম (EDS) উপসর্গ ধরা পড়েছিল লিলির। গত কয়েক বছরে অটো-ইমিউন অটোনমিক গ্যাগ্লিয়োনোপ্যাথি (AAG)-র সমস্যায় ভুগছিলেন। দক্ষিণ অ্যাডিলেডের ফ্লিন্ডার্স মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ধীরে ধীরে রোগীর স্নায়ুতন্ত্র অকেজো করে দেয় এই ব্যাধি। ক্রমশ বিকল হতে থাকে সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। ইডিএস ধরা পড়ার বছরখানেক পর লিলির শ্বাসযন্ত্রের একাংশে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। এমনকী প্রাকৃতিক ভাবে মলত্যাগও করতে পারতেন না তিনি। দোসর হয় গোটা শরীরে অসয্য যন্ত্রণা। ব্যথা উপশমের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। যদিও শারীরিক অবস্থার বিন্দুমাত্র উন্নতি হচ্ছিল না। এক সময় তরুণী বুঝে যান, এই পথ অচিরেই থমকাবে মৃত্যুর কানাগলিতে। অতএব, কঠিন সিদ্ধান্ত নেন লিলি।
যথাসম্ভব ‘দ্য বাকেট লিস্ট’-এর কথা, শেষ সাধ পূরণের কথা জানান। তার মধ্যে ছিল সমুদ্রতটে ঘোরা। লিলির সেই সাধপূরণের ব্যবস্তা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সি-বিচে পৌঁছে গিয়েছিল যাবতীয় মেডিক্যাল সরঞ্জাম-সহ অ্যাম্বুলেন্স। বিছানায় শুয়েই অনন্ত সমুদ্রের অগুনতি ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেয়েছিলেন লিলি। নরম পানীয়ের স্বাদও নিয়েছিলেন। সেই ছবি সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয়। আসলে লিলির কঠিন অসুখ এবং স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন শোরগোল ফেলে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই শোরগোল অবশ্য বিষাদের, কান্নার, মৃত্যুর।
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ জন নাগরিককে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। তবে মৃত্যুর আগে যে কোনও মুহূর্তে নিজেদের সেই সিদ্ধান্ত বদল করতে পারেন তাঁরা। তাঁদেরই অন্যতম লিলি। তরুণ বয়সে মৃত্যুকেই বাঁচার একমাত্র জানালা করলেন যিনি। আরও একবার নশ্বর জীবনের কঠিন সত্যের মুখোমুখি হল পৃথিবী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.