সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশ জ্বলছে। আগুন নিয়ন্ত্রণ দূরের কথা, তা ক্রমশই আয়ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে। পরিস্থিতিকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বর্ষশেষে হাওয়াই দ্বীপে ছুটি কাটিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার জন্য একপ্রস্ত সমালোচনার ঝড়ও সইতে হয়েছে। আর এবার, ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে প্রবল জনরোষের মুখে পড়লেন অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। দাবানলের তাপে কার্যত পুড়তে থাকা নিউ সাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়ার বাসিন্দারা পরিস্থিতির জন্য তাঁকেই দায়ী করলেন। এমনকী ‘মুর্খ’ বলেও দেগে দিলেন কেউ কেউ। দায়ী করা হল অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদেরও।
দিন দুই আগে নিউ সাউথ ওয়েলসের কোবারগো টাউনে প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন জঙ্গলের আগুন নেভাতে প্রায় প্রাণপাত করে দেওয়া দমকল কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁদের পরিশ্রম, প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে আরও উৎসাহিত করতে। কিন্তু ফল হল উলটো। এক দমকলকর্মী তাঁর সঙ্গে করমর্দনই করলেন না। প্রধানমন্ত্রীর বাড়িয়ে দেওয়া হাত উপেক্ষা করে ক্ষমা চেয়ে চলে গেলেন। তাঁর সহকর্মী জানালেন যে দিনরাত আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে তাঁর নিজের বাড়িটাই চলে গিয়েছে আগুনের গ্রাসে। বাড়িটি বাঁচাতে পারেননি ওই অকুতোভয় দমকল কর্মী। এই মানসিক পরিস্থিতিতে তাঁর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এভাবে হওয়াই স্বাভাবিক।
অপরজনের কাছে মরিসন গেলে তিনি বেশ শ্লেষ মিশিয়েই প্রধানমন্ত্রীকে কথা শুনিয়ে দেন। দেশের এমন সংকটজনক পরিস্থিতির মাঝেও বর্ষবরণের রাতে সিডনির সৈকতে আতসবাজি পোড়ানোর অনুষ্ঠানে হাসিমুখে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এমনকী সৈকতের ধারে নিজের বাংলো বাড়িতেও বাজি পোড়াতে মগ্ন ছিলেন তিনি। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দমকল কর্মী বেশ চিৎকার করেই বললেন, ”আপনি এখান থেকে একটি ভোটও পাবেন না। কারণ, আপনি মুর্খ!” এরপর এক মহিলা মরিসনকে বলেন যে উদ্ধারকাজের খাতে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ বাড়াতে। তিনি তাঁর প্রস্তাবের কোনও উত্তর না দিয়েই সেই স্থান পরিত্যাগ করেন। পিছন থেকে বেশ কয়েকজন মহিলা তারস্বরে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ”এটা একদম ঠিক করছেন না। আমাদের বন্যা হোক বা দাবানল, সবসময়ে এই জায়গা ব্রাত্য থেকে গিয়েছে।”
কাজে উৎসাহ দিতে গিয়ে এমন রোষের মুখে পড়তে হবে, বোধহয় এতটা ভাবেননি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তাই এহেন অপমানে মুখ চুন হয়ে গেলেও ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে তিনি বললেন, ”কোনও অপমানই আমি গায়ে মাখিনি। এটা ওঁদের হতাশা এবং সর্বস্ব হারানোর বেদনার বহিঃপ্রকাশ। এমন সংকটজনক পরিস্থিতিতে এমনটা হতেই পারে। আমি সবটা বুঝি। আমরা চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব ওঁদের প্রয়োজনীয় সাহায্য করার।” আগামী ১৩-১৬ তারিখ স্কট মরিসনের ভারত সফরে আসার কথা ছিল। কিন্তু এমন জরুরি পরিস্থিতিতে সেই সফর বাতিল করেছেন। এই মুহূর্তে দাবানল নিয়ন্ত্রণ তো বটেই, দেশবাসীর রোষ সামলানোও তাঁর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.