সুকুমার সরকার, ঢাকা: রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার অভিযোগে মায়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি শেষ হল। এদিন, মায়ানমারের পক্ষে সাফাই বক্তব্য দিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী দেশটির গণতান্ত্রিক নেত্রী আং সান সু কি। তিনি যখন হেগের আদালতে বক্তব্য রাখছিলেন, তখন মায়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ হয়েছে। গণহত্যার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়ে মায়ানমারের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন সু কি। রাখাইনে সহিংসতার কথা স্বীকার করলেও একে কোনওভাবেই গণহত্যা বলা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বুধবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে সু কি দাবি করেছেন, গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় রাখাইনের একটি খণ্ডিত ও বিভ্রান্তিকর চিত্র হাজির করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে সু কি’র দাবি, রাখাইনে কোনও গণহত্যা ঘটেনি, সেখানে আরসার মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াই করছে সে দেশের সেনাবাহিনী। রাখাইনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় সেনাবাহিনীর হাতে নিরীহ লোকজন নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, মায়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী সামরিক আদালতে অপরাধী সেনা সদস্যদের বিচার হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ঘটনায় সেনা সদস্যদের সাজা পাওয়ার কথাও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে জানান তিনি। কিন্তু এর জন্য আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিচার হওয়া অযৌক্তিক বলে দাবি করেন সু কি।
সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় অপরাধীদের দ্রুত বিচার চলছে জানিয়ে সুচি বলেন, আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ হলে দোষী সেনা সদস্যদের বিচার প্রক্রিয়া থমকে যাবে। আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়ার চেয়ে যেকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিচার প্রক্রিয়া সব সময় দ্রুত সম্পন্ন হয়।তিন দিনের এ শুনানির তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার সাক্ষ্য গ্রহণ হবে। এজন্য বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের তিন প্রতিনিধি হেগে গেছেন। যারা আদালতে নিজেদের উপর হওয়া নিপীড়নের বর্ণনা দেবেন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর আইসিজে তে এটি তৃতীয় গণহত্যা মামলার শুনানি। একদিন আগে রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা বন্ধে মায়ানমারকে নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অভিযোগকারী আফ্রিকান দেশ গাম্বিয়ার বিচারবিষয়ক মন্ত্রী আবুবকর তামবাদু।
২০১৭ সালের আগস্টের শেষ দিকে শুরু হওয়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় শুরু হলে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এবার ধর্ষণ, গণহত্যা ও নিপীড়নের দায়ে বৌদ্ধসংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিকে আন্তর্জাতিক আদালতের মুখোমুখি করেছে আফ্রিকার এই ছোট্ট দেশটি। আদালতের বাইরে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করেন বিভিন্ন দেশ থেকে নেদারল্যান্ডসে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকরা। একই সঙ্গে বিক্ষোভ করেছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরাও। এ সময় তারা ন্যায় বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন।
এর আগে, দ্য হেগের স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক রোহিঙ্গা ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে শুনানি শুরু হয়। প্রথম দিন শুনানিতে বক্তব্য রাখেন গাম্বিয়ার আইন ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু। আর আজ বুধবার মায়ানমারের পক্ষে সাফাই বক্তব্য দিয়েছেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর সু কি। অবশ্য শুধু বিক্ষোভ নয়, মামলায় গাম্বিয়াকে লজিস্টিক বিভিন্ন সাপোর্ট দিতে হেগে উপস্থিত আছে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল। শুধু বাংলাদেশ নয়, গাম্বিয়াকে সমর্থন করতে সেখানে আছে কানাডার প্রতিনিধি দল, নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও মুসলিম বিশ্বের দেশগুলির প্রতিনিধিরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.