সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিতর্কত নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার লড়াই ক্রমেই পুরোদস্তুর যুদ্ধের আকার ধারণ করছে। গত রবিবার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে দু’পক্ষেরই বিমান, ট্যাংক, সামরিক হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়েছে। এবার উদ্বেগ বাড়িয়ে মুসলিম রাষ্ট্র আজারবাইজানের হয়ে ককেশাস পর্বতে পাক সেনার হাজির হওয়ার খবর মিলেছে। শুধু তাই নয়, সিরিয়া থেকে তুরস্কের মদতে আজারবাইজানের হয়ে যুদ্ধ করার জন্য জেহাদিরা ময়দানে নেমেছে। পালটা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আর্মেনিয়ার (Armenia) মদতে লড়াইয়ের ময়দানে হাজির হয়েছে রুশ সেনা বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
এদিকে, দুই যুযুধান দেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক ভাল। ফলে এই লড়াইয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি। বৃহস্পতিবার, নাগর্নো-কারাবাখে চলা লড়াই নিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখ থেকে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে চলা অজারবাইযান ও আর্মেনিয়ার লড়াইয়ের উপর আমরা নজর রেখেছি। এতে দু’পক্ষেরই ক্ষতি হয়েছে। এই সংঘর্ষ খুবই উদ্বেগজনক। দুই দেশের কাছেই আমরা সংঘর্ষবিরতির আবেদন জানাচ্ছি। ভারত বিশ্বাস করে কোনও সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই হওয়া উচিত।” বলে রাখা ভাল, মুম্বই থেকে ইরানের ছাবাহার বন্দর পর্যন্ত ‘North-South international transport corridor’ নামের ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পথটি আজারবাইজান হয়ে মস্কো পর্যন্ত গিয়েছে। একইভাবে, কাশ্মীর ইস্যুতে বরাবর ভারতের পক্ষে দাঁড়িয়েছে আর্মেনিয়া। ২০১৯ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা চলাকালীন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেবার কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের হয়ে তুরস্কের সওয়ালের বিপক্ষে ভারতের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল আর্মেনিয়া। তাই দুই বন্ধু রাষ্ট্রের সংঘাতে রীতিমতো উভয়সংকটে পড়েছে নয়াদিল্লি। এহেন পরিস্থিতিতে আজারবাইজানের পক্ষ লড়াইয়ে নেমেছে পাক সেনা বলে অভিযোগ করেছেন আর্মেনিয়ার ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার আভেত আদন্ত। তিনি জানান, ১৯৯০ সালেও বিতর্কিত অঞ্চলের দখল নিয়ে হয় যুদ্ধে আজারবাইজানের (Azerbaijan) পক্ষে লড়াই করেছিল পাক বাহিনী।
উল্লেখ্য, গত রবিবার রাত থেকে নাগর্নো-কারাবাখ সংলগ্ন আর্মেনিয়া নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের দখল নিতে অভিযান চালায় আজারবাইজান সেনা। তাদের প্রতিরোধ করে ওই অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ আর্মেনীয় বাসিন্দাদের ২৫ হাজার সদস্যের মিলিশিয়া বাহিনী ‘আর্টসাক ডিফেন্স আর্মি’। এরপর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আর্মেনিয়ার ফৌজও। গত কয়েকদিনের লড়াইয়ে দু’পক্ষের বেশ কিছু ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ধ্বংস হয়েছে। দু’পক্ষের কয়েকশো সেনার পাশাপাশি বহু অসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন। আর্মেনিয়া হুমকি দিয়েছে, প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্রবাহী দূরপাল্লার রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হবে। অধুনা বিলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের দুই সদস্য দেশের লড়াইয়ে ইতিমধ্যেই জড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বেশ কিছু দেশ। মুসলিম রাষ্ট্র আজারবাইজানকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে তুরস্ক ও পাকিস্তান। অন্যদিকে, খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ আর্মেনিয়ার প্রতি ঝুঁকে রয়েছে আমেরিকা, ফ্রান্স-সহ পশ্চিমী দুনিয়া এবং রাশিয়া। তবে মস্কোর রোষ এড়াতে এই লড়াইয়ে হস্তক্ষেপ না করার বার্তা দিয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান, ন্যাটো জোটকে একই ভাবে আশ্বস্ত করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।
৪ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটারের বিতর্কত নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলটি আজারবাইজানের ভৌগলিক সীমানার মধ্যেও হলেও আর্মেনীয় বিধরোহীদের দখলে। এই অঞ্চলের দখল নিয়ে আর্মেনিয়া-আজাবাইজান মতবিরোধের সূচনা ১৯৮৮ সালে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সদ্যস্বাধীন দুই দেশের মতবিরোধ গড়ায় সামরিক সংঘাতে। সোভিয়েত জমানায় আজারবাইজানের অন্তর্ভুক্ত এই অঞ্চলের প্রায় দেড় লক্ষ বাসিন্দার অধিকাংশই আর্মেনীয় খ্রিস্টান। ১৯৯৪ সালের সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে নাগোরনো-কারাবাখ এবং আশপাশের বেশ কিছু অঞ্চল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আর্মেনিয়ার নিয়ন্ত্রণে। ২০১৬ সালেও ওই এলাকার দখল নিতে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল আজারবাইজান ফৌজ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.