সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাদা মোজায় ঢাকা ছোট্ট পা তখনও আঁকড়ে ধরে রাখা ছিল৷ যাতে না পিছলে পড়ে যায় বছর তিনের খুদে৷ তড়িঘড়ি চোখ বন্ধ অবস্থায় মুকাদকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয়েছিল৷ ব্যস, সেটাই শেষ দৃশ্য৷ তারপর সব ঝাপসা৷ তিন বছরের মুকাদ ইব্রাহিমকে আর কোনওদিন দেখবে না তার পরিবার৷
গত শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের মসজিদে ভয়ংকর সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত ৫০ জনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ মুকাদ ইব্রাহিম৷ ওইদিন বাবা এবং দাদার হাত ধরে ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে গিয়েছিল মুকাদ৷ বড়রা নমাজ পড়ছিলেন৷ আর খুদেটি ইতিউতি ঘুরছিল৷ এমনই সময়ে বন্দুক চালাতে চালাতে মসজিদের ভিতরে ঢুকে পড়ে আততায়ী ব্রেন্টন ট্যারান্ট৷ শুরু হয় তাঁর ধ্বংসযজ্ঞ৷ ঘটনাস্থল থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে নিয়ে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খবর আসে, ছোট্ট মুকাদ নিহত৷ ওইটুকু ভাইয়ের তুলতুলে, নিথর দেহ দেখে কিশোর দাদা আবদি আর কষ্ট চেপে রাখতে পারেনি৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় সেদিনের ভয়াবহ স্মৃতির কথা লিখেছে আবদি৷ মুকাদের ছবি দিয়ে সে লিখেছে, বারবার ভাইয়ের দুটো বড়, বাদামি চোখের কথা মনে পড়ছে তার৷ কী প্রাণবন্ত ছিল ওইটুকু ছেলে৷
বছর কুড়ি আগে আফ্রিকার সোমালিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেখান থেকে পালিয়ে নিউজিল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছিল মুকাদ ইব্রাহিমের পরিবার৷ সেই থেকে এটাই তাঁদের দেশ৷ শান্ত, নিরাপদ দেশ৷ এদেশের মাটিতে যে এমন একটা ঘটনা তাঁদের ছেলেকে কেড়ে নেবে, এমন দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি মুকাদের বাবা, মা৷ বাবা আদান জানাচ্ছেন, ‘সেদিন ওকে ইচ্ছে করেই বাড়ি থেকে নিয়ে বেরিয়েছিলাম৷ শুক্রবার তো আমাদের খুব আনন্দের দিন৷ নমাজ পাঠের পর ছেলেরা সব হ্যাগলিতে গিয়ে ফুটবল খেলে৷ ও ফুটবল দেখতে ভালবাসত৷ তাই ভাবলাম, হ্যাগলির মাঠে ওকে নিয়ে যাব৷’ কান্নাজড়ানো গলায় তিনি বলছেন, ‘সবে প্রার্থনা শেষ করে, খাবারটা মুখে তুলেছিলাম৷ বন্দুকের আওয়াজ শুনে সব থমকে গিয়েছিলাম৷ আর আমার ছোট্ট ছেলেটা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল৷ বন্দুকবাজের কীর্তি দেখে ও বুঝতেই পারেনি, এটা বাস্তব৷ ভাবছিল বোধহয় ভিডিও গেম৷ তাই ওভাবে দেখছিল৷ আর সেটাই কাল হল৷ গুলি থেকে রেহাই পেল না ও৷’
ক্রাইস্টচার্চে গুলিতে ঝাঁজরা স্ত্রী, তবুও খুনিকে ক্ষমা করলেন পঙ্গু স্বামী
কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে দেশটা আর আগের মতো এত শান্ত, সুন্দর রইল না৷ মুকাদের মৃত্যুতে শুধু তার পরিবারই নয়, মূহ্যমান হয়ে পড়েছে নিউজিল্যান্ডের সোমালি সমাজ৷ তিন বছরের ছোট্ট ছেলেটিকে চিনত সবাই৷ ওর মধ্যে বড় কিছু হওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখেছিলেন তাঁরা৷ কিন্তু সেই সম্ভাবনার সামান্যতম প্রকাশিত হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেল একটা জীবন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.