সুকুমার সরকার, ঢাকা: মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর ঘটে চলা অত্যাচার ও আক্রমণের ঘটনা চোখের সামনে দেখতে পেয়েও এর প্রতিবাদ করেননি তিনি৷ এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর বিরুদ্ধে উঠছিল৷ এবার সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই নোবেলজয়ী মানবাধিকার কর্মী আং সান সু কি-র বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপ নিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ এই জননেত্রীকে দেওয়া তাঁদের সর্বোচ্চ সম্মান প্রত্যাহার করে নিল এই মানবাধিকার সংগঠন৷ রোহিঙ্গা ইস্যুতে ‘চুপ’ থেকে নৈতিকবোধ হারিয়েছেন তিনি, যা অত্যন্ত লজ্জার, এই অভিযোগের ভিত্তিতেই সু কি-র সম্মান প্রত্যাহার করেছে ওই সংগঠন৷
[ট্রাম্পের কনভয়ের পিছনে ছুটলেন অর্ধনগ্ন মহিলা, কিন্তু কেন?]
গত বছর রাখাইন প্রদেশ সেনা অভিযানে নামে মায়ানমারের সরকার৷ প্রায় সাত লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে যায়৷ অভিযোগ ওঠে, সেদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপরে অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে সেনা৷ পুরুষ, নারী, শিশু কাউকেই রেয়াত করা হচ্ছে না৷ হত্যা করা হয় হাজার হাজার মানুষকে৷ ধর্ষণের শিকার হন অগণিত মহিলা৷ নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পাননি বৃদ্ধ, শিশু এবং কিশোরও। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় শতাধিক গ্রামে৷ কিন্তু সেনার এই বর্বরোচিত আক্রমণের কোনও প্রতিবাদই করেননি সু কি৷ বরং সেনার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি৷ সেনার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি৷ এরপরই তাঁর নোবেল ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি ওঠে৷ ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি সংগঠন সু কি’কে দেওয়া তাদের খেতাব প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তালিকায় রয়েছে, কানাডা পার্লামেন্টের দেওয়া সম্মানসূচক নাগরিকত্ব সম্মান, অক্সফোর্ডের দেওয়া সম্মান ইত্যাদি৷ এবার তাঁকে দেওয়া সর্বোচ্চ সম্মান ফিরিয়ে নিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ সোমবার পত্র মারফত এই খবরটি দিয়েছেন খোদ সংগঠনের মহাসচিব কুমি নায়ডু৷ পত্রে তিনি লিখেছেন, “ক্ষমতায় আসার পর ন্যায়-নীতি-আদর্শের রাস্তা হারিয়ে ফেলেছেন আপনি৷”
[বিরোধীদের দাবি মেনে পিছিয়ে গেল বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন]
পাশাপাশি, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে মায়ানমার৷ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মায়ানমার প্রশাসন৷ গত ১৫ নভেম্বরই রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সম্মতিপত্র পাঠায় মায়ানমার। মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রথম ধাপে ৪৮৫টি পরিবারের ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেওয়া হবে৷ প্রত্যেকদিন ১৫০ জন করে পনেরো দিনে এদের মায়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া হবে৷ এরপর ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গা ফেরানোর কাজ চলবে। বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লক্ষেরও বেশি। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে মায়ানমার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.