সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যে বাড়ি ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে আছে ভৌতিক হানার জন্য, যে বাড়ির ভৌতিক কাণ্ডকারখানা নিয়ে পাতার পর পাতা লেখা হয়েছে, রীতিমতো সমস্যার সমাধানে নামতে হয়েছে প্রেততত্ত্ববিদদের, যে বাড়ি নিয়ে তৈরি হয়েছে গায়ে কাঁটা দেওয়া ভয়ের ছবিও- সে বাড়ি কিনতে কি কেউ আগ্রহী হবেন?
বাস্তব কিন্তু বলছে অন্য কথা।
১০৮, ওশান অ্যাভিনিউ, অ্যামিটিভিল, নিউ ইয়র্কের নিলামে দাম উঠেছে ৮৫০,০০০ ডলার! ইউরোয় হিসেব করলে দামটা দাঁড়াচ্ছে মোটামুটি ৫৮৬,০০০!
কুখ্যাত অ্যামিটিভিল কেনার জন্য এমন চাহিদা কেন? যে বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রক্ত আর পরলোকের হাতছানি, সেই বাড়ি সত্যি সত্যি কিনতে চাইছেন মানুষ?
সমীক্ষা কিন্তু বলছে, মানুষ ভয় পাচ্ছেন! তাই এবারে নিলামে বাড়িটার দাম কম উঠেছে। ২০১০ সালে এই বাড়িটা বিক্রি হয়েছিল ৯৫০,০০০ ডলারে। এবারে এক লাফে প্রায় এক লক্ষ মতো দাম কমে গিয়েছে।
কারণটা কি ৫টি বেডরুম, ৪টি বাথরুম, একটি বোট-হাউজ, একটি গ্যারাজ এবং তার সঙ্গেই জড়িয়ে থাকা ভৌতিক অতীতের জন্য?
হতেও পারে! অ্যামিটিভিল যে মানুষের থাকার উপযুক্ত নয়, তার নিদর্শন দেখা গিয়েছে সেই ১৯৭৪ সাল থেকেই! সেই সময়ে ওই বাড়িতে বাবা, মা আর চার ভাই-বোনকে গুলি করে হত্যা করে রোনাল্ড ডেফিও! পুলিশ যখন পৌঁছয়, দেখে, ৬টি মৃতদেহ উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে যার যার বিছানায়!
রোনাল্ড ডেফিওর অবশ্য ফাঁসি হয়নি। সে বিচারের সময়ে বার বার বলেছিল, কেউ একজন তাকে এই নির্দেশ দিচ্ছিল। এবং, দিয়েই যাচ্ছিল! একসময়ে থাকতে না পেরে সে শুধু এই নির্দেশ মেনে কাজ করে! ঘটনায় তার অপরাধের কারণ এবং অদৃশ্য কণ্ঠস্বরের বিষয়টির পুরোপুরি কিনারা হয়নি বলে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়।
রোনাল্ড ডেফিও আপাতত রয়েছে সুলিভান কারেকশনাল ফেসিলিটি, ফলসবুর্গ, নিউ ইয়র্কে। একটা প্যারোল নিয়ে ২০১৭-য় মামলার শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে সে।
তার মাঝেই বার বার মালিকানা বদল হয়েছে অ্যামিটিভিলের।
এর পরেই ১৯৭৫-এর ডিসেম্বরে এই বাড়িতে থাকতে আসে লাটজ পরিবার। ৮০,০০০ ডলারে বাড়িটা কেনেন তাঁরা!
বলাই বাহুল্য, তাঁদের এই বাড়িতে বসবাস সুখের হয়নি। হঠাৎ হঠাৎ কনকনে ঠান্ডা লাগা, কোনও কারণ না থাকা সত্ত্বেও দুর্গন্ধ পাওয়া, ইনিয়ে-বিনিয়ে কারও কান্না- এই সব তো তাঁদের নিত্য দিনের অভিজ্ঞতায় ছিলই! পরে, বাড়াবাড়ি হতে থাকে। অশরীরীর গ্রাসে পড়ে লাটজ পরিবারের সদস্যরা। ঠিক কী হয়েছিল, তা নিয়ে তৈরিও হয়েছে ‘দ্য কনজিউরিং ২’। এছাড়া লাটজ পরিবারের সেই অভিজ্ঞতার কথা নিজেদের ব্লগে লিখেও গিয়েছেন প্রেততত্ত্ববিদ এড আর লোরেন ওয়ারেন। লেখা হয়েছে বই- ‘দ্য অ্যামিটিভিল হরর’!
তবে এখন যিনি বাড়িটি বিক্রির দায়িত্বে রয়েছেন, সেই জেরি ওনেল এসব ভুতুড়ে ঘটনার কথা মানতে নারাজ! তাঁর একটাই বক্তব্য, রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা খুব স্পর্শকাতর! কেউ বাড়ি দেখে ভীষণই খুশি হন, কেউ বা একেবারেই হন না! তাই ক্রেতা যাতে সন্তুষ্ট হন, তার জন্য ব্রোকারকেই সচেষ্ট হতে হবে! এসব ভুতুড়ে গল্পে পাত্তা দিলে চলবে না!
অবশ্য, অ্যামিটিভিল যেমন বরাবরই ভুতুড়ে ঘটনার জন্য কুখ্যাত, তেমনই বিখ্যাত তার সৌন্দর্যের জন্যও! সেই সৌন্দর্যই ভুতুড়ে ঘটনায় পাত্তা না দিয়ে নানা সময়ে নানা মানুষজনকে বাড়িটা কিনিয়েছে!
দেখা যাক, এবারে সেই তালিকায় কাদের নাম ওঠে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.