সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিদ্রোহীদের আক্রমণ। আসাদ বাহিনীর পালটা হামলা। দুই শিবিরের সম্মুখ সমরে গত কয়েক মাসে মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে সিরিয়ার আলেপ্পো। ইতিহাসের শহর এখন ধ্বংসের গহ্বরে। সেই ধ্বংসের মধ্যে অন্যতম জিয়নকাঠি ছিল একরত্তি এক কন্যা। নাম বানা আলবেদ। আট বছরের বানার পরপর টুইটে দুনিয়া জেনেছিল আলেপ্পোয় কীভাবে হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব। ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে থেরেসা মে। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে ছোট্ট বানার আবদার ছিল যুদ্ধ বন্ধ হোক। শিশুরা কারও শত্রু নয়। বানার টুইট সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে। সিরিয়ার আট বছরের বানার জন্য দুনিয়ার আগ্রহকে স্বীকৃতি দিল টাইম ম্যাগাজিন। নেটদুনিয়ায় অন্যতম প্রভাবশালী হিসাবে বানাকে বেছে নিয়েছে এই মার্কিন সংবাদমাধ্যম।
পশ্চিম এশিয়ার অশান্তি অবিরাম। ইরাক থেকে সিরিয়া। জ্বলছে এক একটা জনপদ। সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো এখন কার্যত কঙ্কালসার। লাগাতার বিমানহানা, গুলি, বারুদে আলেপ্পোর বাতাসে শুধুই বিষ। বিদ্রোহীদের থেকে আলেপ্পোমুক্ত করতে গিয়ে সিরিয়া সেনা বিপদ আরও বাড়িয়েছে। দু’পক্ষের লড়াইয়ে প্রায় ৭০ হাজার নিরীহের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই শিশু। যারা কোনওরকমে বেঁচে আছে তাদের মাঝেমধ্যেই বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাসের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আলেপ্পোর এই ধ্বংসলীলার কথা দুনিয়ার সামনে তুলে ধরেছিল ছোট্ট একটি মেয়ে। বানা আলবেদ পরপর টুইটে জানিয়েছিল কীভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে আলেপ্পোর শৈশব। মায়ের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে বানা বিধ্বস্ত সিরিয়ার বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেছিল। অল্প কয়েক দিনে মধ্যে বানার ওই ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। প্রায় ৪ লক্ষ টুইটার ব্যবহারকারী বানাকে ফলো করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বানার প্রথম টুইট ছিল, সে বাড়ি থেকে বেরোতে পারছে না। বোমাবর্ষণ বন্ধ হোক। আলেপ্পো খুব ভাল শহর। বানা লিখেছিল সে শান্তি চায়। শিশুর মতো থাকতে চায়, কিন্তু সারাক্ষণ উদ্বেগ। বানার একটি টুইট অনেককে ছুঁয়ে গিয়েছিল। সে লিখেছিল, এটাই তার জীবনের শেষ মুহূর্ত। হয় বাঁচবে, না হলে মৃত্যু। এভাবেই বানা নেটদুনিয়ার আকর্ষণে চলে এসেছিল। এমনকী আলেপ্পোয় যুদ্ধ বন্ধের জন্য ভ্লাদিমির পুতিন, থেরেসা মে, ডোনাল্ড ট্রাম্পদের মতো রাষ্ট্রনায়ককে চিঠি লিখেছিল এই খুদে। বিশ্বজুড়ে বানাকে নিয়ে আগ্রহ দেখে নিউ ইয়র্কের টাইম ম্যাগাজিন আলেপ্পো কন্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ওই পত্রিকা এবছরের সবথেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে বানা আলবেদকে রেখেছে। ব্রিটিশ লেখক জে কে রাওলিং, পপ গায়িকা রিহানা, সেলিব্রিটি কিম কার্দাশিয়ান এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও রয়েছেন তালিকায়। টাইম ম্যাগাজিন এক্ষেত্রে মাপকাঠি হিসাবে রেখেছে সোশ্যাল মিডিয়ার তাদের গুরুত্ব এবং খবরে আসার বিষয়।
গত বছরের শেষে অবশ্য বানা অশান্তি থেকে রেহাই পেয়েছিল। বিদ্রোহীদের দখলে থাকা আলেপ্পো থেকে তুরস্কে আশ্রয় নেয় তার পরিবার। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তায়িপ এরদোগান আনার পরিবারের থাকার এবং পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.