সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কান্দাহার (Kandahar) ফুটবল স্টেডিয়াম। উপচে পড়ছে ভিড়। বাইরে থেকে গর্জন শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এই গর্জন যেন একেবারে অন্যরকম। ভিতরে ঢুকে দেখা গেল মাঝমাঠে পিছমোড়া করে বাঁধা তিন মহিলা। তাঁদের গোটা শরীর বোরখায় ঢাকা। অল্প সময়ের মধ্যে সব শেষ। কালাশনিকভের গুলিতে ঝাঁজরা তিনটি প্রাণ। আর তালিবানি (Taliban) উল্লাস সারা মাঠ জুড়ে।
সময়ের গতিতে এই ঘটনা বিশ বছর আগের। তখনও অভিধানে ভাইরাল শব্দ জনপ্রিয় হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ার জন্ম হয়নি। তবু ২০০১ সালের কান্দাহারের সেই তালিবানি শাসনে লজ্জার ইতিহাস এখনও টাটকা আফগান নারীদের মনে। কী দোষ ছিল ওই তিন মহিলার? ফতোয়া উপেক্ষা করে বাড়িতে শিশুদের ক্লাস নিতেন তাঁরা।
বিশ বছর পার করে আজকের সালিমা মাজারিও বিশ্বাস করতে পারেননি তালিবানকে। তাই গত মাসে তালিবান আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর আফগানিস্তানের (Afghanistan) রাজনীতিবিদরা যখন দেশ ছেড়ে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সেই সময় তিনি হাতে বন্দুক তুলে নিয়েছিলেন। বালখ প্রদেশে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তালিবানের সামনে। আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা গভর্নর। আগ্নেয়াস্ত্রের লেন্সে চোখ রেখে তালিবান জঙ্গিদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছেন তিনি। পুরুষ রাজনীতিবিদরা যখন প্রাসাদে লুকিয়েছেন, তখন তিনি প্রকাশ্যে এসে লড়েছেন। দেখিয়েছেন প্রকৃত ‘মর্দানি’। সেই সালিমা মাজারি এখন তালিবানের হাতে আটক। বালখ প্রদেশের গভর্নর, জননেত্রী এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন কেউ জানে না।
মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে তালিবান প্রতিশ্রুতি ছিল, ‘আধুনিক’ আফগানিস্তান গঠনে দেশের মহিলাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। শরিয়ত আইন মেনে তাঁরা সরকারি কাজে হাত শক্ত করবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, সর্বত্র তাঁদের অংশগ্রহণ থাকবে। কিন্তু কথা ও প্রতিশ্রুতির মধ্যে বিস্তর ফারাক। এমনটাই অভিযোগ আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তর শহর হেরাতের বাসিন্দা ফতিমার। পেশায় চিকিৎসক, গত একসপ্তাহ থেকে বাড়িতে বন্দি। ভয়ে কথা বলতে পারছেন না। কারণ, হেরাত দখলের সময় তাঁদের হাসপাতালেও ঢুকেছিল তালিবান জঙ্গিরা। শাসিয়ে গিয়েছিল আর যদি কোনওদিন হাসপাতালে দেখা যায়, তা হলে মাথা এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যাবে। ‘‘আমি ওদের কথায় বিশ্বাস করি না। ওরা আমাকে আর আমার বোনকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।’’ শুধু ফতিমা নন, কাবুল-কান্দাহারের শয়ে শয়ে কর্মরত মহিলা আজ ভীত-সন্ত্রস্ত।
‘‘ওরা গোঁড়া মৌলবাদী। আধুনিক শিক্ষা সম্পর্কে ওদের কোনও ধারণা নেই। এই কুড়ি বছর আমরা চেষ্টা করেছিলাম এই দেশের যুবসমাজ একটা আধুনিক ধারণা দিতে। কিন্তু আবার আমরা পিছিয়ে গেলাম,’’ বলছেন কাবুলের স্কুল শিক্ষিকা ফারহানা। তাঁর মতে, ‘‘আমি জানি না আমাদের জীবনে কী আছে। বাঁচব কি না, তাও এখন বলতে পারি না।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.