সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আনন্দের উদযাপন শুরু হয়েছিল সেদিন থেকেই, যেদিন অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে সস্ত্রীক বঙ্গসন্তানের নাম ঘোষণা হয়েছিল। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এস্থার ডুফলো বাঙালিকে ফের নিয়ে গিয়েছিলেন গর্বের শীর্ষে। এবার তাঁরা নিজেদের হাতে গ্রহণ করলেন নোবেল পদক, পুরস্কার মূল্য। মঙ্গলবার রাতে স্টকহোমের মঞ্চ ছুঁয়ে গেল বঙ্গ সংস্কৃতিতে। ধুতি-পাঞ্জাবি-গলাবন্ধ পরিহিত অভিজিত আর পাশে দাঁড়ানো ময়ূরনীল শাড়িতে স্ত্রী ডুফলোই কাড়লেন সমস্ত আলো।
চলতি বছর নোবেল পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা হয়েছিল অক্টোবরের মাঝামাঝি। প্রায় দু’মাস পর মঙ্গলবার রাতে তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সুইডেনের রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফ। স্টকহোমের কনসার্ট হলের সেই মঞ্চে তথাকথিত প্রোটোকল ভেঙেই সম্পূর্ণ বাঙালি পোশাকে হাজির হলেন বাঙালি নোবেলপ্রাপক অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ফরাসি স্ত্রী এস্থার ডুফলো।
অভিজিতের পরনে সোনালি পাড় সাদা ধুতি, ঘি-রঙা পাঞ্জাবি, কালো গলাবন্ধ জ্যাকেট। এস্থার পরেন ময়ূরকণ্ঠী নীল শাড়ি, সঙ্গে লাল ব্লাউজ। তাঁকে দেখেই বোঝা যায়, বঙ্গনারীর চিরন্তন পোশাকে তিনি যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ্য। অন্যান্য পুরস্কার প্রাপকদের মাঝে এমন ব্যতিক্রমী পোশাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁদের অবতীর্ণ হওয়া নিয়ে কিছুটা কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু সেই গুঞ্জন একেবারে থামিয়ে দিয়ে অভিজিৎ নিজেই খুব স্পষ্ট করে বলেন, ‘যদি ধরাচুড়ো পরতেই হয়, তাহলে ওদের মতো পরব কেন? নিজেরটাই পরব। এটা তো বিশেষ কোনও ব্যাপার নয়। বরং এটাই স্বাভাবিক। নোবেল কমিটি এই পোশাকে মঞ্চে ওঠার অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে।’ দীর্ঘদিন বিদেশে বসে গবেষণা করলেও, দাপটের সঙ্গে কীভাবে বাঙালিয়ানা বজায় রাখতে হয়, পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে তাও বেশ বুঝিয়ে দিলেন নোবেলজয়ী বঙ্গসন্তান।
এদিনের মঞ্চে ছিলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা নির্মলাদেবী এবং ভাই অনিরুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। নোবেলজয়ী দম্পতির হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার আগে নোবেল কমিটির তরফে অভিজিৎ ও এস্থারের গবেষণা সম্পর্কে বলা হয়, ‘দারিদ্র দূরীকরণের গবেষণায় অভিজিৎ-এস্থারের কাজ অভিনব। তাঁরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গবেষণা করেছেন। তাঁদের গবেষণার মধ্যে দিয়ে বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্যের মূল কারণ আরও গভীরভাবে বোঝা গিয়েছে। এখনও যে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অসংখ্য শিশু স্কুলছুট হয়, অসংখ্য শিশু সাধারণ রোগে মারা যায়, কৃষকরা জৈব সার ব্যবহার করতে পারেন না, এইসব বাস্তব পরিস্থিতিগুলি অভিজিতের গবেষণায় উঠে এসেছে। কেন এই ঘটনাগুলি ঘটে, তার অনুসন্ধান চালিয়েছেন অভিজিতরা।’ আরও বলা হয়, অভিজিতের গবেষণার ধরন ক্যানসারের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য গবেষণার মতোই মতোই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে এখন লোকমুখে ঘোরাফেরা করছে স্রেফ একটাই বিষয় – সুইডেনের মঞ্চে নোবেলজয়ী দম্পতির বাঙালিয়ানার প্রকাশ।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.