এক বাঙালি অভিযাত্রীর নয়া রোমাঞ্চের সাক্ষী হলেন আরেক অভিযাত্রী চন্দন বিশ্বাস।
গত বছর (২০১৯) জুলাই মাসে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছিলেন অনির্বাণ আচার্য। সাধ ছিল, সাইকেলে উত্তর আমেরিকা ঘুরে দক্ষিণ আমেরিকা হয়ে চলে যাবেন পৃথিবীর দক্ষিণতম বিন্দু আন্টার্কটিকায়। ইউএসএতেই কেটে গিয়েছিল পাঁচ মাস, সাইকেল চালিয়েছেন প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার। অবশেষে এই বছর জানুয়ারি মাসে ঢুকে পড়েন লাতিন আমেরিকার কলম্বিয়াতে। রাজধানী বোগোটাতেই ছিলেন একমাস, প্রশাসনিক কাজকর্ম এবং আরও সামনে এগোনোর জন্য ফান্ড রেইসিং করতে। তারপর ধীরে ধীরে চলছিলেন এসপেনাল, নেইবা, হিগানতে, পিতালিত শহরগুলি হয়ে পেরুর দিকে। যদিও প্রথমেই পেরু ঢোকার ইচ্ছা ছিল না, ইচ্ছা ছিল ইকুয়েডর হয়ে পেরু যাওয়ার। কিন্তু হঠাৎ করেই ইকুয়েডর সরকার ভিসা ফি অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়ায় পেরু প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার সাইকেলিংয়ের চালানোর পর আটকে পড়লেন আমাজন অরণ্যের গায়ে সান আগুস্তিন শহরে। কারণ করোনার আউটব্রেক।
কলম্বিয়াতে এখন করোনার স্টেজ ২ চলছে। আক্রান্ত ২১০ জন, মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। কলম্বিয়া, পেরু দুই সরকারই সাবধানতা অবলম্বন করতে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। ফলে অনির্বাণ আক্ষরিক অর্থেই অকূল পাথারে। রাস্তাতেই পরিচয় হয় একদল পর্যটকের সঙ্গে। তাদের সঙ্গেই জঙ্গলের মধ্যে রয়েছেন অনির্বাণ। খাওয়ার রসদ মিললেও জঙ্গল থেকে কাঠ জোগাড় করে কোনওমতে চলছে রান্নাবান্না। এক সময়ের কুখ্যাত ড্রাগ-মাফিয়া পাবলো এসকোবারের দেশ কলম্বিয়া। এখন রাজধানী বোগোটা-সহ বেশিরভাগ জায়গা মাফিয়ামুক্ত হলেও দক্ষিণের এই সান আগুস্তিন-সহ আমাজন অঞ্চলটি এখনও দুষ্কৃতী অধ্যুষিত। তাতে অবশ্য অনির্বাণের কোনও অসুবিধে নেই। অনির্বাণের বক্তব্য, “পথ চলতে গেলে ভাল-খারাপ সব ধরনের মানুষের সম্মুখীন হতে হয়। যদি আমার দিক থেকে ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে তাহলে কেউ আমার ক্ষতি করবে না। লাতিন আমেরিকার মানুষ খুব ভাল এবং কালারফুল। রাস্তায় বেরিয়ে অনেক সময় থাকতে হয়েছে পেট্রল পাম্প, ফায়ার স্টেশন বা টেন্টে। এখনও পর্যন্ত কোন অসুবিধা হয়নি।”
অনির্বাণের কথায়, করোনা ভাইরাস সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যাওয়ার পরই সম্ভবত বেরোতে পারবেন ওই অঞ্চল থেকে। আর ২০০ কিলোমিটার গেলে পুয়ার্তাসিস। এখান থেকেই মূল আমাজন অরণ্য শুরু। সেইখান থেকেই নৌকোয় সাইকেল তুলে নদীপথ ধরে আমাজনের মধ্যে দিয়ে পৌঁছাবেন লেগিসামোতে। সেখান থেকে একটু এগোলেই কলম্বিয়া ইকুয়েডর এবং পেরু বর্ডারে তেসপেরানতেরাস। তারপর আর এগোনো যাবে না সাইকেলে। ফ্লাইট ধরে যাবেন পেরুর ইকিতস আইল্যান্ডে। এরপর একে একে চিলে, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল। একদিন ঠিক পৌঁছে যাবেন আন্টার্কটিকা।
এই সাইকেল অভিযান অনির্বাণের প্রথম নয়। আগে সারা ভারত সাইকেলে ঘুরেছেন তিনি। এছাড়াও সাইকেলে বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডও ঘুরেছেন। প্রসঙ্গত, কলকাতার আরও একজন সাইক্লিষ্ট অর্ঘ্য মণ্ডল গত পরশু বাংলাদেশের ৬৪ জেলা সাইকেলে ঘুরে নজির তৈরি করেছেন। বাংলাদেশের হিসেবে প্রথম কোনও বিদেশি এবং প্রথম ভারতীয় বাংলাদেশের সব কটা জেলা সাইকেলে ট্রাভেল করলেন। দেশে ফেরার চেষ্টায় তিনিও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.