সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বচ্ছল জীবনযাপন ছেড়ে চলে গিয়েছিল আইএস-এ যোগ দিতে৷ জঙ্গিদলে যোগ দিয়ে বেড়ে গিয়েছিল নির্মমতা৷ ৫ বছরের শিশুকে তৃষ্ণার জল পর্যন্ত না দিয়ে সে ঠেলে দিয়েছিল মৃত্যুর মুখে৷ ইসলামিক স্টেটের সেই জার্মান তরুণীর বিরুদ্ধে এবার শুরু যুদ্ধাপরাধের মামলা৷
সালটা ২০১৪৷ জেনিফার ডব্লিউ, মিউনিখের বছর বাইশের তরুণী পড়াশোনা, ঘরবাড়ি ছেড়ে তুরস্ক হয়ে পাড়ি দিয়েছিল সিরিয়ায়৷ সেখান থেকে ইরাকে গিয়ে যোগ দিয়েছিল আইএস জঙ্গিগোষ্ঠীতে৷ সেসময় আইএস বিশ্বের ত্রাস হয়ে উঠেছে৷ ইসলামিক দুনিয়া কাঁপছে তার দাপটে৷ যেমন নৃশংসতা, তেমন শক্তিশালী৷ উন্নত বিশ্বের মানুষজনও তাদের জেহাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দলে দলে যোগ দিয়েছিল আল কায়দা পরবর্তী কুখ্যাত জঙ্গিগোষ্ঠীতে৷ তেমনই একজন জেনিফার ডব্লিউ৷ জঙ্গিদলে যোগ দিয়ে জেনিফারের নৃশংসতা আরও বেড়ে গিয়েছিল৷ অভিযোগ, ক্রীতদাসের মতো ব্যবহার করত দলের অন্যান্যদের সঙ্গে৷ বিয়েও করেছিল এক আইএস সদস্যকে৷ তাহা সাবা নুরির সঙ্গে ইরাকে গিয়ে পেতেছিল সংসার৷ তখন ইরাকেও আইএস-এর দাপট৷
একদিকে সংসার, আরেকদিকে জেহাদ৷ দু’য়ের মাঝে জেনিফারের জীবন একেবারেই সহজভাবে চলেনি৷ একাধিক অপরাধের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে তার৷ সেটা ২০১৫ সাল৷ ইরাকের মসুল শহর দখল করে নিয়েছে ইসলামিক স্টেট৷ বাসিন্দারা ভয়ে হয় শহর ছেড়ে চলে গিয়েছে, নয়ত জঙ্গিদের হাতে বন্দি৷ এমনই সময়ে এক ইয়াজিদি অর্থাৎ উত্তর ইরাকের এক প্রাচীন জনগোষ্ঠীর এক মা ও মেয়েকে রীতিমত অর্থের বিনিময়ে কিনে নিয়েছিল জেনিফার এবং তাহা৷ মধ্যযুগের স্মৃতি ফিরিয়ে এনে ৫ বছরের ইয়াজিদি কন্যা এবং তার মাকে বাড়ির দাসীতে পরিণত করেছিল৷ তাদের উপর নিত্যই চলত অকথ্য অত্যাচার৷
এমনই একটা দিন বাচ্চা মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ জেনিফারের স্বামী তাকে চেন দিয়ে বেঁধে রাখে৷ মেয়েটি একফোঁটা জলের জন্য হাহাকার করতে থাকে৷ কিন্তু একবিন্দু জল দেওয়া দুরঅস্ত, তাকে বাড়ির বাইরে বের করে দেওয়া হয়৷ এইভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়৷ ইরাকের মরু অংশের গনগনে তাপে, জলের অভাবে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে ৫ বছরের বাচ্চা মেয়েটি৷ ঘটনা জানাজানি হতে নেমে পড়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলি৷ যুদ্ধাপরাধ, অস্ত্র আইন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের মতো একাধিক অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে৷
তারপর কেটে গেছে ৫টা বছর৷ শক্তি ক্ষয় হয়েছে ইসলামিক স্টেটের৷ ধরা পড়ে গিয়েছে জেনিফার, তাহা সাবা নুরিরা৷ সোমবার থেকে মিউনিখ শহরে শুরু হল জেনিফারের বিচার প্রক্রিয়া৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের তরফে আইনজীবী হিসেবে লড়ছেন প্রখ্যাত অভিনেতা জর্জ ক্লুনির স্ত্রী আমাল ক্লুনি৷ জেনিফারকে কড়া শাস্তি পাওয়ানো তাঁর লক্ষ্য৷ দোষী প্রমাণিত হলে, তার আজীবন কারাবাস হবে৷ তবে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর জেনিফারের অপরাধের কথা জেনে শিউড়ে উঠছে তাবৎ বিশ্ববাসী৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.