সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হাজার হাজার নিঃসন্তান দম্পতি আশায় বুক বেঁধেছিলেন। একদিন তাঁদের ঘর আলো করে আসবে ফুটফুটে সন্তান। তাই তাঁরা সাহায্য নিয়েছিলেন আইভিএফের। গাজার বেশ কয়েকটি ফার্টিলিটি ক্লিনিকে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন বহু দম্পতি। কিন্তু হামাস-ইজরায়েল যুদ্ধে সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার গিয়েছে তাঁদের। রয়টার্সের এক রিপোর্ট অনুযায়ী গাজায় ইজরায়েলের বোমাবর্ষণে ৪ হাজারের বেশি ভ্রূণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, গাজায় অন্তত ৯টি আইভিএফ ক্লিনিক রয়েছে। যেখানে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সংগ্রহ করে রাখা হয়। সেই রকমই একটি ছিল আল বাসমা আইভিএফ সেন্টার। রয়টার্স সূত্রে খবর, গত ডিসেম্বর মাসে গাজার এই বৃহৎ ফার্টিলিটি ক্লিনিকে আছড়ে পড়ে ইজরায়েলি ফৌজের বোমা। সেসময় ওই ক্লিনিকে তরল নাইট্রোজেনের পাঁচটি ট্যাঙ্ক মজুত ছিল। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ওই ট্যাঙ্কগুলোর ঢাকনা ফেটে যায়। এবং সেগুলোর তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। অতিরিক্ত গরমে ট্যাঙ্কগুলোর মধ্যে থাকা ৪ হাজারের উপর ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি হাজারের উপর শুক্রাণু এবং নিষিক্ত ডিম্বাণুর নমুনাও সংরক্ষণ করা হয়েছিল। বাঁচানো যায়নি সেগুলোকেও। ট্যাঙ্ক থাকা ওই ভ্রূণগুলোই ছিল হাজার হাজার প্যালেস্তিনীয় দম্পতির শেষ আশা। যা একটা বোমার আঘাতে মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
১৯৯৭ সালে গাজায় ওই ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কেমব্রিজ থেকে প্রশিক্ষিণপ্রাপ্ত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বাহালদিন গালায়িনি। এই ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছেন গালায়িনি। তিনি জানিয়েছেন, “আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছে। ৫ হাজার প্রাণ ছিল। আরও প্রাণের সঞ্চার হত সেখান থেকে। এমন বহু দম্পতি রয়েছেন যাঁরা আর শুক্রাণু আর ডিম্বাণু উৎপাদন করতে পারবে না। তাঁদের শেষ আশা ছিল ওই ভ্রূণগুলো। যা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যাঁরা সন্তানের আশায় বুক বেঁধেছিলেন তাঁরাও আর অন্তস্বত্বা হওয়ার সুযোগ পেলেন না।” ইজরায়েলি সেনার আক্রমণে গোটা গাজা ভূখণ্ড কার্যত ধ্বংসের রূপ নিয়েছে। এবার প্রকাশ্যে এল আরেক মর্মান্তিক তথ্য।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে বেনজির হামলা চালায় প্যালেস্তিনীয় জঙ্গি সংগঠন হামাস। যার বদলা নিতে গত ছয় মাস ধরে গোটা গাজা ভূখণ্ড গুঁড়িয়ে দিচ্ছে তেল আভিভ। খুঁজে খুঁজে আক্রমণ করা হচ্ছে জেহাদিদের ডেরায়। ইজরায়েলি বাহিনীর হাতে নিকেশ হয়েছে হামাসের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। কিন্তু এই যুদ্ধে প্রাণ হারাচ্ছেন গাজার নিরীহ মানুষরাও। ইতিমধ্যেই সেখানে মৃতের সংখ্যা ৩৩ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। এই মৃত্যুমিছিল নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে পড়েছে ইহুদি দেশটি। কিন্তু হামাস নিধনে নিজের লক্ষ্যেই অবিচল ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.