সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একটা আলোর রশ্মি, সেটাকে দরকার মতো ছোট বা বড় করে কোনও এক বা একাধিক বস্তুকে এক জায়গা থেকে সরিয়ে আরেক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন কোনও এক রহস্যময় বিজ্ঞানী।
কল্পবিজ্ঞানের ছবিতে এমন দৃশ্য বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল এক সময়ে। তিন থেকে আটের দশকের মধ্যে। তখন সিনেমায় কল্পবিজ্ঞানের বেশ রমরমা। পর্দায় এমন দৃশ্য দেখে অভিভূতই হতেন দর্শকরা। কিন্তু, কল্পবিজ্ঞান তো কল্পনাই। আলোর আবার কোনও শক্তি আছে নাকি! যে তা দিয়ে কোনও বস্তুকে সরানো যাবে। আটের দশকের শেষদিকে সেই প্রশ্নেরই জবাব দিলেন এক মার্কিন বিজ্ঞানী। নাম আর্থার অ্যাশকিন। তিনি জানালেন, আলোর তেজস্ক্রিয়তাকে ব্যবহার করে বাস্তবেও বস্তুকে সরানো যায়, ঠেলা যায়, টানা যায়, নেড়ে চেড়ে দেখাও যায়। আর তা সম্ভব হয় আলোর আঙুলের সাহায্যে। এই আলোর আঙুল, যা কি না আদতে তেজস্ক্রিয়তারই চাপশক্তি, তার আরেক নাম হল অপটিক্যাল টুইজার।
[ আর্থিক অনটন তুঙ্গে! শখের প্রকল্পে বরাদ্দ কমাচ্ছে পাকিস্তান ]
মঙ্গলবার ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর, কল্পনার প্রযুক্তিকে বাস্তব রূপ দেওয়া সেই আর্থার অ্যাশকিনকেই নোবেল পুরস্কার দিয়ে সম্মান জানাল সুইডিশ রয়্যাল অ্যাকাডেমি ফর সায়েন্সেস। আর মার্কিন বিজ্ঞানী আর্থার অ্যাশকিনের সেই আবিষ্কারকে সফল ব্যবহারিক প্রয়োগ করে পুরস্কারের ভাগীদার হলেন ফ্রান্সের বিজ্ঞানী জেরার্ড মুরো ও কানাডার বিজ্ঞানী ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড। যে লেজার রশ্মি ব্যবহার করে খুব সহজেই আমাদের চোখের একাধিক অপারেশন ও চিকিৎসা আধুনিক বিজ্ঞানে সম্ভব, যা চোখের পারিপার্শ্বিক কোনও ক্ষতিসাধন না করেই অবলীলায় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার মতো সূক্ষ থেকে সূক্ষতম বস্তুকে সরাতে পারে, সেই প্রযুক্তি আদতে অ্যাশকিনের অপটিক্যাল টুইজারকে ব্যবহার করেই সম্ভব করেছেন দুই বিজ্ঞানী মুরো ও স্ট্রিকল্যান্ড। যা একই সঙ্গে অর্ধশতক পর পদার্থবিদ্যাকে এনেদিল তৃতীয় মহিলা নোবেলজয়ীও। একই সঙ্গে ৯৬ বছর বয়সে নোবেল পেয়ে অ্যাশকিন হলেন প্রবীণতম নোবেলজয়ী।
লেজার ফিজিক্স নিয়ে এই তিন বিজ্ঞানীর কাজ চিকিৎসাক্ষেত্রে বিশেষ করে চোখের চিকিৎসায় বিপ্লব এনেছে। তাই তিন বিজ্ঞানীকে সম্মান জানিয়েই মঙ্গলবার পুরস্কার ঘোষণা করে সুইডিশ রয়্যাল অ্যাকাডেমি ফর সায়েন্স। তবে তারা জানিয়েছে, পুরস্কারের অর্ধেকের দাবিদার একা অ্যাশকিন। বাকি অর্ধেক যুগ্মভাবে পাবেন মুরো ও স্ট্রিকল্যান্ড। তবে ভাগাভাগি করে হলেও স্ট্রিকল্যান্ডের নোবেলজয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বইকি! কেন না, পদার্থবিজ্ঞানে তিনিই তৃতীয় মহিলা বিজ্ঞানী যিনি নোবেল কমিটির তরফে তাঁর কাজের স্বীকৃতি পেলেন।
[ সম্মুখসমরে বেজিং-ওয়াশিংটন! দক্ষিণ চিন সাগরে মুখোমুখি দু’দেশের রণতরী ]
এদিন পুরস্কারের অর্থ ৯০ লক্ষ সুইডিশ ক্রোনার ঘোষণা নোবেল কমিটি জানায়, কল্পবিজ্ঞানকে বাস্তবে এনেছেন অ্যাশকিন। মুরো আর স্ট্রিকল্যান্ড সেই আবিষ্কারকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছেন ক্ষুদ্রতম আর সবচেয়ে জোরালো লেজার পাল্স। যা চোখের চিকিৎসায় পারিপার্শ্বিক ক্ষতিসাধন না করেই ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার মতো বস্তুকে সরাতে পারে বা ধরতে পারে।
মঙ্গলবার সুইডিশ রয়েল অ্যাকাডেমি ফর সায়েন্সেস পুরস্কারটি ঘোষণা করে আরও জানায় ভাইরাসের মতো ক্ষুদ্র কণাকে কোনো ক্ষতি না করেই ধরা যাবে ‘অপটিক্যাল টুইজার্স’ এর সাহায্যে। আর স্ট্রিকল্যান্ড ও মুরো ছোট ও তীব্র ‘লেজার পালস’ তৈরি করেছেন, যা শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রেই নয় শিল্পক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যাবে। তিন বিজ্ঞানীর এই আবিষ্কার লেজার ফিজিক্সকে ভবিষ্যতে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে অ্যাকাডেমি। অন্যদিকে, স্ট্রিকল্যান্ডের নোবেল জয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তৃতীয় নারী হিসেবে পদার্থবিদ্যায় নোবেল জিতলেন স্ট্রিকল্যান্ড। এর আগে ১৯০১ সালে নোবেল পুরস্কার চালু হওয়ার পর ১৯০৩ সালে প্রথম মহিলা হিসেবে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পান ম্যারি কুরি নামের বিজ্ঞানী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.