Advertisement
Advertisement

Breaking News

তত্ত্ব সাজানোর মুনশিয়ানাতে টেক্কা, বাঙালি বিয়েবাড়ির সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে…

তত্ত্ব সাজানোর ইতিকথা।

Wedding Tattwa: Asthetically rich ritual in Bengali wedding
Published by: Saroj Darbar
  • Posted:November 8, 2024 7:11 pm
  • Updated:November 8, 2024 7:12 pm  

বিয়ের কথা পাকা। এবার যে বিষয়টি নিয়ে কনের আর বরের বাড়ি দারুণ আগ্রহে অপেক্ষা করে, তা হল— বিয়ের তত্ত্ব। বাঙালি বিয়েতে তত্ত্বের গুরুত্ব বহুমাত্রিক। তত্ত্বের আদান-প্রদানের বহুকালের রীতিটি তাই আজও সমান ভাবেই চালু। এর মধ্যে গায়ে হলুদের তত্ত্বই প্রধান। কারণ, প্রাথমিক ভাবে এই গায়ে হলুদের তত্ত্ব দেওয়া-নেওয়ার মাধ্যমেই দুই পরিবারের সামাজিক সম্পর্কের নান্দীমুখ। আগেকার দিনে মূলত গায়ে হলুদের তত্ত্ব ও ফুলশয্যার তত্ত্ব নিয়ে দু’বাড়ির মধ্যে রেষারেষিও চলত। কোন পক্ষই চাইত না তাদের দেওয়া তথ্য অন্য পক্ষের থেকে গুণে বা মানে কম হোক।

Advertisement

ছেলের গায়ে হলুদ ঠেকানো হলে সেই হলুদ-সহ মাছ ও অন্যান্য নানা প্রসাধনী সামগ্রী ও মিষ্টি বেতের ঝুড়িতে বা ডালায় সুন্দর করে সাজিয়ে কনের বাড়িতে পাঠানোর রেওয়াজ ছিল। তার সঙ্গে নতুন আত্মীয়দের জন্যেও থাকত বিশেষ ধরনের উপহার। এর বদলে ফুলশয্যার জন্য কনের বাড়ি থেকে বর ও কনের জন্য নতুন পোশাক, মিষ্টি, ক্ষীরের বাটি ইত্যাদি ও বাড়ির গুরুজনদের জন্য বিভিন্ন ধরনের উপহার পাঠানো হত। তত্ত্ব সাজানোর মুনশিয়ানা মূলত মহিলাদেরই। আলপনার মধ্যে যেমন সৃজনের ছোঁয়া, অনেকটা সেরকমই তত্ত্ব-সাজানোর মধ্যেও থাকে নান্দনিক উদ্ভাস। অনেকগুলো জিনিস কেবল ঠেসেঠুসে পাঠিয়ে দেওয়া নয়। তা কতখানি পরিপাটি ও চমৎকার করে করে সাজানো-গোছানো যায়, তাই-ই এখানে মুখ্য।

আর তাই এই তত্ত্বের ডালা সাজানো নিয়ে দুই বাড়ির মধ্যে চলত সূক্ষ্ম প্রতিযোগিতা। অবশ্যই সামাজিক ও আর্থিক প্রতিপত্তি বোঝানোর দিকটিও এর সঙ্গে থেকে যায়। সচ্ছল গৃহস্থ পরিবারে বা বিত্তশালী পরিবারে বিয়ে হলে তত্ত্ব হত দেখার মতো একটি বিষয়। পাড়াপড়শি থেকে আত্মীয়-স্বজন সকলেই এসে জড়ো হতেন ছেলের বাড়ি অথবা মেয়ের বাড়ি থেকে কেমন তত্ত্ব পাঠানো হয়েছে বা সে তত্ত্বের মধ্যে নতুনত্ব কী রকম রয়েছে তা দেখার জন্য। অনেকেই তাক লাগানোর জন্য বিদেশি ফল, নতুন ধরনের মিষ্টি, দামি সিল্ক বা মসলিনের জামাকাপড় আমদানি করতেন।

বাড়ির মেয়েদের হাতে তৈরি মিষ্টি বা তত্ত্বের ডালা সাজানোর ক্ষেত্রে তাদের শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল রীতিমতো আলোচনার বিষয়। অনেকেই মজা করার জন্য মাটি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি বা শোলার তৈরি খাবার দাবার পাঠাতেন নতুন বেয়াই বা বেয়ানের উদ্দেশে। প্রত্যুত্তরে তাঁদের জন্য অভিনব সব খাবার-দাবার অথবা প্রসাধনের জিনিস আমদানি হত।

তত্ত্ব সাজানোর রীতিতে আজকাল অনেকটা বদল এসেছে। যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়ার দরুণ তত্ত্ব সাজানর লোকের অভাব ইদানীং চোখে পড়ে। সেই সূত্রে অনেকেই প্রফেশনাল ব্যক্তি বা সংস্থার সাহায্য নেন। তবে পদ্ধতি যা-ই হোক না কেন, তত্ত্ব-সাজানোর নান্দনিক গুরুত্ব এখনও অবিকল। ফলত বিয়েবাড়িতে তত্ত্ব-সাজানোর সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।

(প্রতিবেদনটি ‘ছাঁদনাতলা’ ফিচারের অংশ।)

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement