কথায় বলে, যার বিয়ে তাঁর হুঁশ নেই, পাড়াপড়শির ঘুম নেই। সত্যিই তো, বিয়ে কি আর কম ঝক্কির ব্যাপার! তা নিয়ে মাথাব্যথা যদি থেকেও থাকে, তবে তেমন দোষের নয়। বহু রীতিনীতি, উপাচার জুড়ে আছে বিয়ের সঙ্গে। আর তারই মধ্যে খুব দরকারি একটি বিষয় হল নেমন্তন্ন করা। আত্মীয় হোক বা বন্ধুবান্ধব, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলার সময় শুধু হাতে কি যাওয়া চলে! এককালে সে রীতি ছিল বটে। তবে সময় বদলেছে। আর তাই কার্ড ছাড়া বিয়ের নিমন্ত্রণ এখন যেন ভাবাই যায় না। তবে ডিজিটাল যুগে সেই কার্ডের ধরনেও এসেছে বেশ বদল।
বিয়ের কার্ডে কাজের তথ্য সামান্যই। বিয়ের দিনক্ষণ, পাত্রপাত্রীর পরিচয় ইত্যাদি। তবে বিয়ের কার্ড বলতে সেটুকু মাত্র বোঝায় না। আঙ্গিক এখানে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই যেমন-তেমন কার্ড হলেই চলে না, বিয়ের কার্ডের নান্দনিক দিকটিও মাথায় রাখতে হয়।
নিজের বিয়ের কার্ডে কী লেখা হবে, তা নিয়ে নাকি খুব সিরিয়াস ছিলেন রবি ঠাকুর। তিনি মোটেও চাননি, তাঁর বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রে থাকুক সাধারণ একঘেয়ে কথা। কিন্তু তিনি তো রবি ঠাকুর! তাঁর কর্মকাণ্ড যে একেবারে নজরকাড়া হবে তাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমজনতার সাধ্য কী নিজের পছন্দমতো বিয়ের কার্ডের বয়ান লেখেন! কাজটি সহজ করতে তাই এককালে ছিল ধরাবাঁধা ছক। সেই ছকে ফেলে দিয়ে নাম-ধামের হদিশ বলে দিলেই কেল্লাফতে। কাজটি করে দেয় বিয়ের কার্ডের দোকানগুলোই। মোটামুটি বাঁধাধরা বয়ান সেখানে তৈরিই থাকে। আলাদা আলাদা রকমের কার্ডের ডিজাইনও সামনেই থাকে। পাত্র বা পাত্রীপক্ষ তা পছন্দ করে দিলেই কার্ড তৈরি। বহুদিন পর্যন্ত এই রীতিই চলছিল। বিয়ের পাকা দেখা হয়ে গেলেই কার্ডের খোঁজ চলে কলেজ স্ট্রিট চত্বরে। এখনও যে তা নেই, তা বলা যায় না। তবে ক্রমে কার্ডের রীতিতে এসেছে বদল।
এখন অনেকেই খোঁজ করেন পার্সোনালাইজড কার্ড। ইউনিকনেস এখানে ইউএসপি। এমন একটি কার্ড যা গড়পড়তা নয়। সেই বদল এল বয়ানেও। ছবির ব্যবহারে। কার্ডের ডিজাইনে। এই বদলের রেওয়াজে বিয়ের কার্ডের সঙ্গে জুড়ে গেল নানা অনুষঙ্গ। কোনও কার্ডে দেখা গেল পরিবেশ সচেতনতার প্রসঙ্গ, কোথাও আবার জানান দেওয়া হল রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা। এমনকী সাম্প্রতিক কোনও ঘটনার প্রতিবাদের বার্তাও ছুঁয়ে ফেলল বিয়ের কার্ড।
পাশাপাশি দিজিটাল যুগের প্রভাবও বেশ ভালোই পড়েছে কার্ডের পসরায়। ছাপা কার্ডের বদলে অনেকেই ঝুঁকছেন ডিজিটাল কার্ডে। যা সহজেই পাঠিয়ে দেওয়া যায় হোয়াটসঅ্যাপে। ফলত সেখানে লেখার পাশাপাশি ভিডিও এবং সাউন্ডের একটা বড় ভূমিকা নিল। ভয়েস ওভার দিয়ে বেশ চমৎকার বিয়ের ডিজিটাল নিমন্ত্রণপত্র বেশ ট্রেন্ডিং।
তবে, খরচখরচা মাথায় রাখা একটা বড় ব্যাপার। চলতি ডিজাইনের কার্ডের ক্ষেত্রে, খরচ মোটামুটি নির্দিষ্ট। কলেজ স্ট্রিট চত্বরে খোঁজ নিলেই সে আন্দাজ মেলে। তবে কাস্টোমাইজড কার্ডের ক্ষেত্রে খরচ অনেকটাই নির্ভর করছে, চাহিদার উপর। বিয়ের ক্ষেত্রে আগেভাগে বাজেট করে রাখেন প্রায় প্রত্যেকেই। সেখানে একতা অংশ কার্ডের জন্য বরাদ্দ করে রাখলেই ভালো। নজরকাড়া কার্ডের জন্য পকেটকে আগাম জানান দিয়ে না রাখলে কি চলে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.