সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে নারাজ। লোকসভার উত্তর থেকে দক্ষিণ ছুটে যুযুধান দুই প্রার্থী শুধু নিজেদের কথা নয়, প্রতিপক্ষ শিবিরকে হেয় প্রমাণ করার জন্য মরিয়া। ভোটের এটাই নিয়ম। কিন্তু মনোনয়ন জমা দিতে এসে যদি মুখোমুখী হয়ে যায় দুই শিবির। কী ধুন্ধুমার ঘটে যেতে পারে। একই দিনে মনোনয়ন জমা দেবে তৃণমূল ও বামেরা। একটি কী হয়, কী হয় ভাব ছিলই। কিন্তু দুই শিবির মুখোমুখি হয়ে যে সৌজন্যতার নজির গড়ে ফেলবেন তা কেই বা জানত। বামপ্রার্থী দেবলীনা হেমব্রম ও তৃণমূল প্রার্থী বীরবাহা সোরেন এলেন সামান্য আগে-পরে। মুখোমুখী হতেই প্রার্থীর সঙ্গে আসা শাসকদলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এগিয়ে গিয়ে সিপিএম প্রার্থী প্রাক্তন মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ অনেকদিন পরে দেখা। কেমন আছেন, ভাল আছেন তো।” ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনের সিপিএম প্রার্থী দেবলীনা হেমব্রমও সপ্রতিভভাবে বললেন, “আপনি ভাল আছেন তো। শরীর ভাল আছে? লড়াই কিন্তু হবে। রাজনীতির লড়াই হবে।” আর এইভাবেই এদিন বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে সিপিএম এবং তৃণমূল মনোনয়ন জমা দিতে এসে রাজনৈতিক সৌজন্যতার নজির গড়ল।
[আরও পড়ুন: রাতে রাজনৈতিক দলের প্রবেশ নিষেধ, অনুব্রতর নিদানের পরই পোস্টার পড়ল গ্রামে]
এদিন প্রথমে সিপিএমের প্রার্থী দেবলীনা হেমব্রমকে সামনে রেখে একটি মিছিল এসে থামে ঝাড়গ্রাম জেলাশাসকের অফিসের সামনে। তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরই আসেন তৃণমূল প্রার্থী বিরবাহা সোরেন। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে এদিন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার আগে ঝাড়গ্রাম শহরের হিন্দিমিশন মাঠ থেকে ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচ মাথা মোড় পর্যন্ত একটি বিশাল মিছিল হয়। এদিনের মিছিলে একেবারে প্রথম সারিতে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী বিরবাহা সোরেন,ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূল কোর কমটির চেয়ারম্যান, বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা, কোর কমিটির সদস্য দূর্গেশ মল্লদেব, উজ্জ্বল দত্ত, ঝাড়গ্রাম জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা, শহর যুব তৃণমূলের সভাপতি অজিত মহাতো প্রমুখ। জেলা শাসকের দফতরের কাছে আসেন দলের মহাসচিব, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানে প্রার্থী বীরবাহা সোরেনকে সঙ্গে করে নিয়ে যান মনোনয়ন জমা দিতে। জেলাশাসকের দপ্তরের সামনেই মুখোমুখী হন সিপিএম প্রার্থী দেবলীনা হেমব্রমের সঙ্গে। আর সেখানেই দুই শিবিরের শুভেচ্ছা বিনিময়ে ও কুশল কামনায় সৌজন্যের নজির তৈরি হল। এই প্রসঙ্গে পার্থবাবু বলেন, “উনি আগে বিধানসভার সদস্য ছিলেন। সৌজন্যমূলক কথা হয়েছে।” দেবলীনা হেমব্রম বলেন, “অনেক দিন পরে দেখা হল। কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করি। উনিও আমাকে জিজ্ঞাসা করেন আমি কেমন আছি। বলেছি লড়াই হবে। সৌজন্যতামূলক কথাবার্তা হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী অশান্তিতে উত্তপ্ত চোপড়া, গুলিবিদ্ধ কিশোর]
অন্যদিকে, এদিন পার্থবাবু সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “গতবারের থেকেও এবার আরও বেশি ব্যবধানে প্রার্থী জিতবেন। এখানে ফ্যাক্টর একটাই সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন। জঙ্গলমহলে আজ যে পরিবর্তিত রূপ সেই রূপ স্বাধীনতার পরে এতদিন কেউ করেনি। যেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন। সে কথাই আমরা সবাইকে বলছি। ” এদিন ঝাড়গ্রাম লোকসভার দলীয় প্রার্থী বীরবাহা সোরেনের সমর্থনে চন্দ্রকোনায় সভাও করেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কড়া সমালোচনা করেন।
ছবি: প্রতিম মৈত্র
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.