চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: এই তো সেদিন মুনমুন সেন তাঁদের হাত ধরে তালে তালে পা মেলালেন। বাবুল সুপ্রিয়র মনোনয়নপত্র জমার দিন ধামসা- মাদল বাজিয়ে মিছিলেও হাঁটলেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের ন্যূনতম চাওয়া পাওয়ার বিষয়ে খবর রাখেন কি কেউ? হয়তো না। তাই বাধ্য হয় এবার ভোট বয়কটের পথে হাঁটতে চলেছেন জামুরিয়ার বাসিন্দারা।
জামুরিয়ার আদিবাসী অধ্যুষিত পাড়াগুলিতে তীব্র জলসংকট রয়েছে আজও। চার দশক ধরে সমস্যার সমাধান হয়নি। জলসংকট তীব্র কেন্দা ও পরাশিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষিত শালডাঙা, কুলডাঙা, মাঝিপাড়া এলাকায়। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের জলের কোনও পাইপ লাইনই নেই সেখানে। ইসিএলের খনি আবাসনে যে জল সরবরাহ করা হয়, তা দূর থেকে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেটাও পর্যাপ্ত নয়। সেইসঙ্গে ইতিমধ্যেই গরমে কুয়োর জলস্তরও নামতে শুরু করেছে। গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মী হেমব্রম, মঙ্গল সোরেনরা জানিয়েছেন, “ভোটের আগে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা আসেন, প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর। কিন্তু ভোটের পরে তাঁরা আর আসেন না।” তাই তাঁরা ঠিক করেছেন জলের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভোট দেবেন না।
জামুরিয়া গ্রামীণ তৃণমূল সভাপতি মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নতুন করে পিএইচই-র পাইপ লাইন পাতার কাজ শুরু হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় ইতিমধ্যেই জল চলেও এসেছে। বাকি জায়গাতেও আসবে। ১৯৯৫ সালে দরবারডাঙায় প্রথম জলপ্রকল্প তৈরি হয়েছিল৷ সেই প্রকল্প থেকে অর্ধেক এলাকায় জল দেওয়া সম্ভব হত৷ ২০০৬ সালে এখানে দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের জন্য পুরসভা তৎকালীন সরকারের কাছে ডিপিআর পাঠায়৷ কিন্তু তার অনুমোদন মেলেনি৷
আসানসোল পুরনিগমের জলবিভাগের মেয়র পারিষদ পূর্ণশশী রায় জানিয়েছন, বাম আমলে জলপ্রকল্প চালু হলে ৬০ শতাংশ জল শিল্পের জন্য কলকারখানাগুলিকে দেওয়া হবে বলে চুক্তি হয়েছিল তৎকালীন জামুড়িয়া পুরবোর্ড, এডিডিএ ও শিল্পসংস্থাগুলির মধ্যে৷ ঠিক হয়েছিল, তিন বছর পর শিল্পসংস্থাগুলি নিজেদের জলের ব্যবস্থা করে নেবে৷ কিন্তু সবাই তা করেনি৷ এখন ওই জলের ৫০ শতাংশ গ্রামীণ এলাকাগুলিতে দেওয়া গেলে সেখানে জলকষ্ট অনেক কমে যেত৷ তিনি বলেন, “৪০ কোটি টাকার নতুন জলপ্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে৷ কাজ দ্রুত শেষ হবে৷”
সিপিএমের জেলাসম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মনোজ দত্ত জানান, রাজ্য, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ, পুরনিগম সবই তৃণমূলের দখলে। তারা জলসংকট মেটাতে কিছুই করেনি। বিডিও অনুপম চক্রবর্তী কার্যত স্বীকার করে নেন, কয়েকটি এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। তিনি জানান, জলের পাইপ লাইন পাতার কাজ শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণ কাজ হয়ে গেলে সংকট মিটে যাবে। তবে ভোট বয়কটের কথা তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেন। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, প্রয়োজনে গ্রামবাসীদের কাছে গিয়ে ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে। তাঁদের সচেতন করা হবে যেন ভোট নষ্ট না করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.