সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: ‘জাত’রোগে এবার ভুগছে সিপিএমও। বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক ‘টক্কর’ দিতে এবার তফসিলি জাতির সমর্থকের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন সারলেন সিপিএম প্রার্থী। আর সেই ‘খবর’ ঢালাওভাবে প্রচারও করল সিপিএম। পরে এই চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতি চাপা দিতে দল থেকেই চাপ দেওয়া হয় স্থানীয় নেতৃত্বকে। এই মধ্যাহ্নভোজন নিয়ে প্রচার হতেই তা ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়েছে সিপিএম নেতৃত্ব। শনিবার দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকায় বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরি প্রচার করেন। দুপুরে দুর্গাপুরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কলাবাগান বস্তিতে দলীয় কর্মী ষষ্ঠী বাউরির বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন করেন আভাসবাবু। আর এই নিয়েই বিতর্ক শিল্পাঞ্চল জুড়ে।
বিগত প্রায় দিন কুড়ি ধরে দুর্গাপুরে প্রচার করছেন সিপিএম প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরি। প্রতিদিনই তিনি কোথাও না কোথাও মধ্যাহ্নভোজন করছেন। কখনও দলীয় কার্যালয়ে কিংবা কখনও দলীয় কর্মীর বাড়িতে। কিন্তু তা জানতে পারছে না সংবাদমাধ্যম। কিন্তু শনিবারের মধ্যাহ্নভোজন ফলাও করে প্রচার করা হয় দলের পক্ষ থেকে। তফসিলি জাতির দলীয় কর্মীর বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন তবে কি প্রচারের আলোয় আনার জন্যেই সিপিএমের এই উদ্যোগ? কয়েক বছর আগে বিজেপি এই রাজ্যে এই রীতি প্রচলন করে। তাদের রাজ্য কিংবা সর্বভারতীয় নেতাদের বিভিন্ন তফসিলি জাতি উপজাতির বাড়িতে পাত পেড়ে খাওয়ার দৃশ্য দেখেছে এই রাজ্যের মানুষ। কিন্তু এই রীতি ধোপে না টেকায় তা বাতিলও করে বিজেপি। এবার সমাজের নিম্নবর্গের মানুষ সিপিএমের সঙ্গে আছে তা প্রচার করতেই এদিনের মধ্যাহ্নভোজনের প্রচার করল সিপিএম বলে দাবি তৃণমূলের। রাজনৈতিকভাবে দৈন্যতার কারণেই এখন সিপিএমকে এই শ্রেণির মানুষদের কাছে গিয়ে খেতে হচ্ছে এবং তা ফলাও করে প্রচারের জন্যেও বলা হচ্ছে বলে জানান তৃণমূলের জেলার কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়।
তিনি আরও বলেন, “বিজেপির পথ অনুসরণ করতে চাইছে সিপিএম। কিন্তু সমাজের কোনও শ্রেণির মানুষই আজ আর তাদের সঙ্গে নেই। গরিবের প্রকৃত সাথী মা মমতা বন্দোপাধ্যায়। মরণকালে হরিনাম করে আর ওদের লাভ হবে না।” যদিও মধ্যাহ্নভোজনের পরই অস্বস্তি এড়াতে ময়দানে নেমে পড়ে সিপিএম। তবে কি বিজেপিকে ঠেকাতে সিপিএমও জাতপাতের রাজনীতিতে নামতে বাধ্য হল? বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরি বলেন, “এই কথা ভাবতেও আমার গা ঘিনঘিন করে। প্রচারে বেরিয়ে কোনওদিন পার্টি অফিসে আবার কোনওদিন দলীয় কর্মীর বাড়িতে খাই। আজকের এই মধ্যাহ্নভোজনের কথা আলাদাভাবে কেন মিডিয়াকে জানানো হল তা আমি জানি না। প্রচারের মাঝে তা জানার কথাও নয়।” শুধু প্রার্থীই নয়, দলের জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারও এই ঘটনা চাপা দিতেই বলেন, “প্রার্থীর সারাদিনের প্রচারের উপর নজর রেখেছে সংবাদমাধ্যম। তারাই কোনওভাবে খবর পেয়েছে। অন্য দলকে এদের নিয়ে রাজনীতি করতে হয় সিপিএমকে নয়। এরাই আমাদের দলের এখনও মূল চালিকাশক্তি। এরাই দলের ভীত।”
ছবি: উদয়ন গুহরায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.