সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: প্রথম দিনই মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর গ্রাম থেকে পুরুলিয়ায় রবিবাসরীয় প্রচারে ‘ঝড়’ তুলতে গিয়ে ছন্দপতন হল বিজেপির। প্রায় তিরিশটি ছোট গাড়ি ও শতাধিক বাইক মিছিলে নির্বাচনী বিধিভঙ্গে জড়াল গেরুয়া শিবির। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের কোনও অনুমতি ছাড়াই ওই কনভয় নিয়ে মিছিল করায় নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে বলে অভিযোগ। ফলে এই ঘটনায় শাসকদল তৃণমূল-সহ বামফ্রন্টও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে কমিশনে যাচ্ছে। কিন্তু পুরুলিয়া জেলা বিজেপি জানিয়েছে, এই রবিবাসরীয় প্রচারে তারা কোনও মিছিল করেননি। তাদের ভোট প্রচারে এটা সাধারণ মানুষের আবেগ। পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মুফতি শামিম বলেন, আদর্শ আচরনবিধি ভঙ্গ হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুরুলিয়া লোকসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী ঘোষণা করতে দেরি করলেও প্রচারে তাদের কোনও খামতি ছিল না। শনিবার বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রার্থীর নাম জানিয়ে দিতেই ওই দিন থেকেই প্রার্থীকে নিয়ে প্রচার শুরু হয়ে যায়। তবে এদিন পুরুলিয়া এক নম্বর ব্লকের গাড়াফুসড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চিড়কায় গৌরীনাথধাম শিব মন্দিরে পুজো দিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেন এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর খাসতালুক। এদিন ওই চিড়কায় পুজো দিয়ে সেখান থেকে তিরিশটি গাড়ির কনভয় ও শতাধিক বাইকের মিছিল যায় মন্ত্রীর গ্রাম গাড়াফুসড়ে। ওই তিরিশটি গাড়ির মধ্যে একটি গাড়িতেই ছিলেন প্রার্থী তথা পুরুলিয়া জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো, বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী ও দলের আরেক জেলা সাধারণ সম্পাদক বিবেক রাঙ্গা। সেই গাড়ি ও বাইকের কনভয় থেকেই দলের নেতা–কর্মীরা তাদের প্রার্থীকে জেতাতে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তোলেন।
নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধিতে রয়েছে, গাড়ি বা বাইকের কনভয় যাই হোক না কেন একশো মিটার গ্যাপ ছাড়া দশটির বেশি গাড়ি বা বাইক হলেই তা নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হয়ে থাকে। ফলে ভোট প্রচারের এই কর্মসূচির কোনও অনুমতিই বিজেপি নেয়নি বলে অভিযোগ। তাই কমিশনের ক্যামেরাও সেখানে যায়নি। কিন্তু তারপরেও বিতর্ক পিছু ছাড়ল না গেরুয়া শিবিরকে। যেভাবে প্রচারের প্রথম দিনই বিজেপি ধাক্কা খেল তাতে খানিকটা চাপে পড়েছে পুরুলিয়া জেলা বিজেপি। তবে এই বিষয়ে প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো ও দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, “এখানে কোনও মিছিল আমরা করিনি। শাসক দলের মন্ত্রীর গ্রাম থেকে ভোটপ্রচার করে তাঁর দুর্গ আমরা ভেঙে দিয়েছি। তাই সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে আবেগে চলে এসেছেন। আমরা কি করতে পারি?”
এদিন প্রার্থী পুজো দিতে এসেও কার্যত জনজোয়ারে ভেসে যান। লাগোয়া গ্রামগুলি থেকে সাধারণ মানুষজন এসে তার গলায় মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। প্রার্থীর পুজোপর্বে বাজতে থাকে ঢাক। হয় লাড্ডু বিলি। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ও এই কেন্দ্রের বাম প্রার্থী বীর সিং মাহাতো দু’জনেই বলেছেন, ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে তারা কমিশনে যাবেন। তবে পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.