শুভময় মণ্ডল: রাজনীতিতে যোগ দিতে ঝাঁ চকচকে কর্পোরেট চাকরি ছেড়েছিলেন। দলের কঠিন সময়েও মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গিয়েছেন সংগঠনের কাজে। অবশেষে প্রতিদান পেলেন দলের একনিষ্ঠ সৈনিক। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণার পর শুভেচ্ছাবার্তায় ভেসে যাচ্ছেন কংগ্রেস নেতা রণজিৎ মুখোপাধ্যায়। ২০০৯ সালে চাকরি ছাড়ার পর তার পরের বছর কংগ্রেসে যোগদান। তারপর দীর্ঘপথ পেরিয়ে লোকসভা ভোটে প্রার্থী। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে রণজিতের রাজনৈতিক কেরিয়ার। ২০১৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হবেন আশা করেছিলেন। কিন্তু সেবার জোটপ্রার্থীর জন্য প্রচারে বেরোতে হয়েছিল। তাও অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে করেছেন। এবার তিনি প্রার্থী। প্রতিপক্ষ গতবারের সাংসদ তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতা। বিজেপি এখনও ওই কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। আর বাম প্রার্থী নিয়ে ভাবিত নন রণজিৎ। তৃণমূলকে বিনা যুদ্ধে সুচাগ্র মেদিনীও ছাড়তে রাজি নন এই যুব নেতা। বললেন, লড়াই হবে সমানে সমানে।
ভোট প্রচারে অন্যতম হাতিয়ার কী হবে? প্রশ্নের উত্তরে সপাট উত্তর রণজিতের। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের একাধিক ইস্যুকেই লোকসভায় হাতিয়ার করে প্রচারে নামবেন তিনি। আগামিকাল থেকেই পুরোদমে প্রচারে নামতে চলেছেন তিনি। জানালেন, এর আগে ২০১৩ সালে সংগঠনের কাজে বর্ধমান জেলার একাধিক অঞ্চলে তিনি সময় কাটিয়েছেন। নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রের সমস্যা নিয়ে যথেষ্ঠ ওয়াকিবহাল তিনি। বললেন, ‘বিদায়ী সাংসদ গত পাঁচ বছরে এলাকার উন্নয়নে কী কাজ করেছেন সবাই জানেন। ওনার দেখা পাওয়া যেত না। ওই অঞ্চলের যুব প্রজন্মের জন্য না রাজ্য না কেন্দ্র গত পাঁচ বছরে কিছুই করেনি। বেকারত্ব বেড়েছে, কৃষকরা ফসলের সহায়ক মূল্য পাচ্ছে না, সিন্ডিকেট-রাজের বাড়বাড়ন্ত। মানুষ পরিবর্তন চাইছে। তাই পরিবর্তনের লক্ষ্যে মানুষ বিকল্প বেছে নেবেন বলে আশা করছি।’ কেন্দ্রের একাধিক ইস্যু নিয়েও সরব তিনি। তাঁর অভিযোগ, একটাও নতুন প্রকল্প নেই বর্তমান সরকারের। পুরনো প্রকল্পগুলিকেই নতুন নামে চালাচ্ছে মোদি সরকার। এ দ্বিচারিতা ছাড়া আর কী? প্রশ্ন তুলেছেন রণজিৎ। ক্ষমতায় এলে দেশের ২০ শতাংশ গরিব পরিবারকে বার্ষিক ভাতা দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি কংগ্রেস সভাপতি দিয়েছেন তা নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হবে বলে মত রণজিতের।
[আরও পড়ুন: ভোট প্রচারে বেরিয়ে ভিক্ষুকদের দ্বারস্থ বালুরঘাটের বিজেপি প্রার্থী]
কংগ্রেসকর্মী ছাড়াও তাঁর আরও একটি পরিচয় তিনি কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন নগরপাল প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের ছেলে। কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে মূলধারার রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন মানুষের সেবায় নিয়োজিত হওয়ার জন্য। কংগ্রেসের মিডিয়া রিসার্চ সেলের দায়িত্ব সামলেছেন একটা সময়। সংগঠনের কাজে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্যে দিনের পর দিন পড়ে থেকেছেন। তাই হারার কিছুই নেই বলে মনে করেন তিনি। বললেন, ‘আমি কোনও ব্যবসায়ী নই, যে অন্য জায়গা থেকে এসে প্রার্থী হয়েছি। ভোটপাখীও নই যে নির্বাচন শেষ হলেই উধাও হয়ে যাব। দলের সংগঠনের জন্য পরিশ্রম করেছি। তারই প্রতিদান স্বরূপ প্রার্থী হিসাবে বিবেচিত হয়েছি। সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্যরা আমার নাম সুপারিশ করেছেন। রাহুল গান্ধী আমাকে প্রার্থী করেছেন। এটাই আমার বিরাট পাওনা। দলের কাজে যেভাবেই আসি সেটা বিরাট প্রাপ্তি আমার কাছে। নিরাশ করব না দলকে। এই কেন্দ্রে লড়াই কতমুখী হবে তা নিয়ে মন্তব্য করব না। কিন্তু বিনা যুদ্ধে হাল ছাড়ব না।’ জেতার ব্যাপারেও আত্মবিশ্বাসী তিনি। এখন দেখার ভোটবাক্সে সেই প্রত্যয় কতটা প্রতিফলিত হয়।
[আরও পড়ুন: ফের প্রধানমন্ত্রী হোন মোদি, মনস্কামনা পূরণের জন্য অন্নত্যাগ পুরোহিতের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.