সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: টার্গেট প্রায় ৭০ শতাংশ হিন্দু ভোটব্যাংক৷ ঠিক সেই কারণেই সোমবার উলুবেড়িয়ায় জনসভা থেকে সম্পূর্ণ মেরুকরণের তাস খেললেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷ একদিকে যেমন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্গাপুজো, বিসর্জন, সরস্বতী পুজো ও রাম নবমীর উপর নিষেধাজ্ঞা বসানোর অভিযোগ তুললেন তিনি৷ তেমনই, ইস্যু করলেন গো-পাচার ও ইমামদের ভাতা বৃদ্ধিকে৷ টেনে আনলেন ধূলাগড়, বসিরহাট, ইসলামপুরের সংঘর্ষকে৷ আইন-শৃঙ্খলা ও সিন্ডিকেট রাজের অভিযোগ তুলে আক্রমণ শানালেন তৃণমূল কংগ্রেসকে৷
[ আরও পড়ুন: ৩ বছরেও গড়ে উঠল না ভাঙনে তলিয়ে যাওয়া ঘর, প্রতিবাদে ভোট বয়কটে বীরনগর ]
সোমবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির বক্তৃতার অনেকটা অংশজুড়েই ছিল মেরুকরণের বার্তা৷ বক্তৃতার শুরুতেই তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদি দুর্গাপুজোকে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি দিতে চাইছেন৷ কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দুর্গাপুজো, বিজয়া দশমী ও সরস্বতী পুজোর উপর নিষেধাজ্ঞা বসাচ্ছে৷ তৃণমূল সরকারকে উৎখাত না করলে বাংলায় অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে না৷ বাংলায় বিজেপির সরকার প্রতিষ্ঠা হলে, তবেই দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো হবে৷’’ তৃণমূলকে আক্রমণ করে অমিত শাহের আরও অভিযোগ, বাংলায় ‘জয় শ্রীরাম’ বলার উপর এবং রাম নবমী উদযাপনের উপর নিষেধাজ্ঞা বসানোর চেষ্টা করছে সরকার৷ যা হিন্দু ধর্মের পরিপন্থি৷ এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে একজোট হওয়ার বার্তা দেন তিনি৷ বলেন, ‘‘সিপিএম-কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোকাবিলা করতে পারবে না৷ ওদের ভোট দেওয়ার মানে ঘুরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলকে ভোট দেওয়া৷ একমাত্র বিজেপিকে ভোট দিলে তবেই মমতা পরাস্ত হবে৷ সিপিএম-কংগ্রেস যা করতে পারবে না, মোদির নেতৃত্বে বিজেপিই তা করতে পারবে৷’’ এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও অভিযোগ করেন, এরাজ্যে ইমামদের ভাতা দেওয়া হয়, কিন্তু পূজারীদের দেওয়া হয় না৷ বাংলাতেই সবচেয়ে বেশি গরু পাচার হয়৷
[ আরও পড়ুন: মৌসম নূরের ছবি বিকৃত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট, ভোটের আগের চাঞ্চল্য ]
উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে হওয়া জনসভা থেকে অমিত শাহের হুঁশিয়ারি, ‘‘বাংলাকে কাঙাল বানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপড়ে ফেলবে বিজেপি৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এখানে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা পাবে৷ বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে ৯০ দিনের মধ্যে বাংলায় সিন্ডিকেট রাজ বন্ধ হবে৷’’ উলুবেড়িয়ার সভামঞ্চ থেকে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বুয়া-ভাতিজা জুটি’ বলে কটাক্ষ করেন শাহ৷ প্রশ্ন করেন, ‘কীভাবে দিন দিন তৃণমূল নেতাদের সম্পত্তি বাড়ছে, তার হিসাব দিন’৷ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বারবারই বিরোধীদের তরফে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে শাসকের বিরুদ্ধে৷ এবারের লোকসভা নির্বাচনে যাকে হাতিয়ার করেছে বিজেপি-সহ অন্যান্য বিরোধীরা৷ পঞ্চায়েতের প্রসঙ্গ টেনেও এদিন তৃণমূলকে আক্রমণ করেন অমিত শাহ৷ শাসকদলের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে ৩৭ শতাংশ প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে দেয়নি তৃণমূল৷ এবার তা করতে পারবে না৷ এবার নির্বাচন কমিশন প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করছে৷ এবার মমতার গুন্ডারা লেজ তুলে পালাবে৷ মমতা বুথ ক্যাপচার করতে পারছে না বলেই রেগে যাচ্ছেন৷’’
পাঁচ বছরে মোদি সরকার বাংলার জন্য কী করছে, বক্তব্যের মাঝে মাঝে সেই খতিয়ানও তুলে ধরেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি৷ জানান, ‘‘পাঁচ বছরে বাংলার জন্য ৪ লক্ষ ২৪ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র৷ যা তৃণমূল নেতারা খেয়ে ফেলেছেন৷ শহরাঞ্চলে ৮০০ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে৷ গ্রামীন এলাকায় রাস্তার জন্য ১২০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে৷ কলকাতা মেট্রোর জন্য ১২০০ হাজার কোটি দেওয়া হয়েছে৷’’ পুলওয়ামা কাণ্ডকে হাতিয়ার করেও এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেন অমিত শাহ৷ দেশাত্মবোধের তাস খেলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেন৷ জানান, ‘‘ওদিক থেকে গুলি এলে, এদিক থেকে গোলা যাবে৷’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.