বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ প্রকাশ হওয়ার পর প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করতে সবচেয়ে বেশি সময় নিয়েছে বিজেপি৷ কিন্তু তারপরও এ রাজ্যের ৪২ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি৷ যার মধ্যে অন্যতম নদিয়ার রানাঘাট কেন্দ্র৷ দেওয়ালে চুন লাগিয়ে দলের প্রতীক পদ্মফুল এঁকে ‘এই চিহ্নে বোতাম টিপুন’ – এটুকু লেখার কাজ সারা৷ এখন অপেক্ষা শুধু প্রার্থীর নাম ঘোষণার৷ সময় যাচ্ছে, প্রার্থীর নাম আর ঘোষণা হচ্ছে না৷
দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করে এবার অধৈর্য হয়ে পড়ছেন রানাঘাট কেন্দ্রের বিজেপি কর্মীরা৷ তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ আর হতাশা দানা বাঁধছে। বিশেষত, মতুয়া সম্প্রদায় অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রচার যখন তুঙ্গে, তখন বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিজেপি প্রথম ধাপেই কয়েক কদম পিছিয়ে বলে মনে করছেন তাঁরা। অনেকের মধ্যেই গা ছাড়া মনোভাব৷ প্রশ্ন উঠছে, এই কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণায় কেন এত দেরি হচ্ছে? কী এর কারণ? দলের সাধারণ কর্মীদের মনে প্রশ্ন উঠলেও, স্থানীয় নেতৃত্ব কিন্তু সবটাই জানেন৷
রানাঘাট কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণা মোটেই সহজ কাজ নয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে৷ নদিয়া দক্ষিণ জেলা সংগঠনের অন্যতম সদস্য, ডাক্তার অর্চনা মজুমদারের নাম ওঠা মাত্রই দলের অন্দরেই অন্তর্কলহ শুরু হয়ে যায়৷ অন্দরের খবর, এই নাম শোনামাত্রই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন একদল কর্মী, সমর্থক৷ এমনিতে অর্চনা কলকাতার বাসিন্দা হলেও, দীর্ঘদিন ধরে রানাঘাটে যাতায়াত৷ স্থানীয় নেতৃত্বের একটা অংশ তিনি৷ কিন্তু তা সত্বেও দলের একাংশ তাঁকে ‘বহিরাগত’ বলেই মনে করছেন৷ তাঁদের সাফ কথা, ‘অর্চনা মজুমদার নামে যাঁর কথা শোনা যাচ্ছে, তিনি ইতিমধ্যেই এই জেলায় কয়েকটি মেডিক্যাল ক্যাম্প করে নিজেই নিজের নাম লোকসভা প্রার্থী হচ্ছেন বলে প্রচার করেছেন। এই ধরনের কাউকে দলের এমন ইতিবাচক আসনে প্রার্থী করা হলে আখেরে দলের কোনও লাভ তো হবেই না, বরং দলের ক্ষতি হবে৷’ আবার রামনগর এলাকার বাসিন্দা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শুভঙ্কর দেবনাথের বক্তব্য, ‘অর্চনা মজুমদার প্রার্থী হলে, দলের পক্ষে তা ভাল হবে৷ উনি একজন চিকিৎসক, লড়াকু মহিলা৷ তাঁকে প্রার্থী করা হলে উপকৃত হবেন মানুষ৷ বিজেপি এই কেন্দ্র থেকে নিশ্চিন্তে জিতবে৷’
এমনিতেই প্রথম দফায় বিজেপির প্রার্থী ঘোষণার পর বিভিন্ন জায়গার দলের সাধারণ কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গিয়েছে৷ কোথাও কোথাও লিখিতভাবে তারা প্রার্থী বদলের দাবি জানাচ্ছেন৷ আর রানাঘাটে প্রার্থী ঘোষণার আগেই তাঁরা বহিরাগতর বদলে স্থানীয় প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়ে রাজ্য কমিটিকে চিঠি দিয়েছেন৷ বর্তমান জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকার-সহ আরও দু,তিনটি নাম তাঁরা প্রস্তাব আকারে পাঠিয়ে রেখেছেন৷ এরপরও বহিরাগত প্রার্থীর নাম ঘোষিত হলে প্রকাশ্যে তা বিদ্রোহের রূপ নেবে না কিংবা তাঁকে উপরে উপরে মেনে নিলেও বিরোধিতার চোরাস্রোত থাকবে না, তা নিশ্চিত হয়ে বলা যায় না৷ যেমনটা প্রাথমিকভাবে হয়েছে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে৷ কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের পাঁচ বারের প্রার্থী প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ওরফে জলুবাবুকে প্রার্থী করা হবে, এই আশায় ছিলেন ওই কেন্দ্রের বিজেপির অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা। তা না হওয়ায় ক্ষোভ চাপা থাকেনি৷ তবে শীর্ষ নেতৃত্বের মনোনীত প্রার্থী কল্যাণ চৌবে জলুবাবুর সঙ্গে দেখা করে, তাঁকে প্রণাম করে পরিস্থিতি অনেকটাই হালকা করে নিয়েছেন৷ তবে রানাঘাটের পরিস্থিতি এমনটা নাও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: সুজিত মণ্ডল
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.