রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: ব্রিগেডজুড়ে যেন মহাযজ্ঞ। চার বছর পর ঐতিহাসিক ব্রিগেডে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাই গোটা ময়দানকে ঘিরেই সাজো সাজো রব। মোদিকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রাজ্য বিজেপি। গেরুয়া পতাকা আর কাটআউটে সেজেছে ময়দান। গেরুয়া গেঞ্জি পরে স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন মাঠজুড়ে। আর চৈত্রের দাবদাহ থেকে সমর্থকদের বাঁচাতে অ্যালুমিনিয়ামের ছাউনি তো রয়েছেই। সভা শুরুর আগে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে আনার চেষ্টা চলছে মুম্বইয়ের পরিচিত মুখ বাঙালি এক সংগীত শিল্পীকে।
উত্তরবঙ্গের জেলার কর্মী-সমর্থকদের জন্য শিলিগুড়িতে প্রথমে সভা করছেন নরেন্দ্র মোদি। সেখান থেকে আসবেন কলকাতায় শুধুমাত্র দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির কর্মী-সমর্থকদের দিয়েই বুধবার ব্রিগেড ভরানো কার্যত চ্যালেঞ্জ গেরুয়া শিবিরের কাছে।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, “মাত্র দশদিনের প্রস্তুতিতে ঝুঁকি নিয়েই আমরা ব্রিগেড করছি। একইদিনে শিলিগুড়ি ও ব্রিগেড, দু’টি সভা করার সাহস আমরা রেখেছি। কর্মীদের পরিশ্রমে এই সভা আমরা সফল করতে চাই। আত্মবিশ্বাস আছে। আমরা সফল হব।” শুধুমাত্র দক্ষিণবঙ্গের জেলার কর্মী-সমর্থক দিয়ে ব্রিগেড উপচে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে রাজ্য বিজেপি। তাও যে সে নয় যেখানে প্রধান বক্তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাই রাজ্য নেতৃত্বের কাছে এই ব্রিগেড ‘ঝুঁকির’ ব্রিগেডও। মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মূল মঞ্চ ৬০ বাই ৩০ ফুট। যেখানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও থাকবেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ শীর্ষ নেতৃত্ব। রাত পর্যন্ত খবর, শেষমেশ যদি কোনও পরিবর্তন না হয় তাহলে দক্ষিণবঙ্গের প্রার্থীরাও থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে। মঞ্চের পিছনে লাগানো থাকছে বিশাল জায়ান্ট স্ক্রিন। মূল মঞ্চের লাগোয়াই থাকছে প্রধানমন্ত্রীর ‘রেস্ট রুম’। ভিক্টোরিয়ার দিকে থাকা এই মূল মঞ্চের দু’পাশে থাকছে ৩৪ বাই ২৪ ফুটের আরও দু’টি মঞ্চ। যেখানে রাজ্য নেতৃত্ব, জেলা পর্যবেক্ষক, জেলা সভাপতিরা থাকবেন। মূল মঞ্চের সামনে ডি-জোন অর্থাৎ নিরাপত্তা বলয়। তারপর দর্শকাসন।
যে দর্শকাসন অ্যালুমিনিয়ামের ছাউনিতে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তিনটি রো-তে মোট ৯টি জার্মান হ্যাঙার দিয়ে ছাউনি হয়েছে। তবে পুরো ব্রিগেডে ছাউনি নেই। একটা বড় অংশই ফাঁকা রয়েছে। মঞ্চের বাঁ দিকে ছাউনি শেষের কিছুটা অংশ ছেড়ে বাঁশের সঙ্গে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলে মাঠে গিয়ে দেখা গেল শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতির কাজ চলছে। তদারকিতে ব্যস্ত রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ও মিডিয়া ইনচার্জ সপ্তর্ষি চৌধুরি। সকালেই মাঠে ঘুরে গিয়েছেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
দলীয় সূত্রে খবর, ছাউনির মধ্যে ও সারা মাঠজুড়ে মোট ১০০টি জায়ান্ট স্ক্রিন থাকছে। আড়াই হাজার স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। বিশেষ প্রমুখ স্বেচ্ছাসেবকদের পরনে থাকবে গেরুয়া টি-শার্ট। এছাড়াও সাদা পোশাকের কিছু স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন যাঁদের কাজ হচ্ছে বহিরাগত কেউ এসে কোনও গন্ডগোল সৃষ্টির চেষ্টা করছে কি না তা দেখা। এই সাদা পোশাকের স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে রাজ্য নেতাদের যোগাযোগ থাকবে। কোনও সন্দেহজনক কিছু নজরে এলেই হোয়াটসঅ্যাপে তাঁরা নির্দিষ্ট জায়গায় জানাবেন। এই ধরনের ১৫০জন স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও বিশেষ নজরদারিতে মাঠ জুড়ে থাকছে কয়েকশো সিসিটিভি। এক রাজ্য নেতার কথায়, মেদিনীপুর ও ঠাকুরনগরে মোদির সভায় যে বিশৃঙ্খলা হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেজন্যই এই কড়া সতর্কতা। হাজারের বেশি মাইক লাগানো হয়েছে। রেড রোড ও মেয়ো রোড পর্যন্ত মাইক রয়েছে।
এদিকে সূত্রের খবর , সমর্থকদের আনার জন্য আইআরসিটিসি মারফত চারটি ট্রেন ভাড়া করা হয়েছে বিজেপির তরফে। রামপুরহাট, ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া থেকে হাওড়া আসবে তিনটি বিশেষ ট্রেন। এছাড়া লালগোলা থেকে কলকাতা স্টেশন পর্যন্ত আরেকটি ট্রেন থাকছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.