সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একুশের রণক্ষেত্রের আগেই দলবদলের ঢল নেমেছিল বাংলায়। কেউ শাসকদল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে এসেছে তো কেউ আবার বাম ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূলের দাবি, দল ভাঙিয়ে ভোটে জেতার আশায় বুক বেঁধেছিল বিজেপি। কিন্তু ফল হল সম্পূর্ণ উলটো। দলবদল করে নিজেদের গড়ে দাঁত ফোঁটাতে পারলেন না তাঁরা। কেউ কেউ তো নিজেও হেরে বসলেন। সবমিলিয়ে একুশের ভোট এটা প্রমাণ করে দিল, দলবদলের এই ট্রেন্ড নেতাকর্মীদের মোটেও ভালভাবে নেয়নি বঙ্গবাসী। বরং তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন।
শুভেন্দু অধিকারী: এই মরশুমে সবচেয়ে হাই ভোল্টেজ দলবদল ছিল তাঁর। কাঁথির অধিকারী পরিবারের কাঁধে ভর দিয়ে দুই মেদিনীপুর নিজেদের ঝুলিতে ভরতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সে গুড়ে বালি! মেদিনীপুর-সহ জঙ্গলমহলে বিজেপিকে তেমন সুবিধা করে দিতে পারলেন না তিনি। জঙ্গমহলের ১১টির মধ্যে ৯টি আসন তৃণমূলের দখলে গিয়েছে। মেদিনীপুরে বিজেপির ভরাডুবি দেখে রাজনৈতিক মহল বলছে, এখানকার রাজনীতি আর আধিকারী পরিবারে হাতের ইশারায় চলে না। বরং এই দুর্নীতির অভিযোগ বিদ্ধ নেতার উপর ভরসা করে কার্যত ভরাডুবি হল গেরুয়া শিবিরের, দাবি বিজেপির একাংশের।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়: শুভেন্দু পরবর্তী সময় আরেক হেভিওয়েট মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। দল ছাড়ার পর তৃণমূলের বিরুদ্ধে একাধিক ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি। বিজেপির ‘বিশ্বস্ত’ ভোট সেনাপতি হয়ে হাওড়ার বৈতরণী পার করানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু কোথায় কি! রেকর্ড ভোটে জিতে থাকা ডোমজুড়ে গো-হারা হারলেন তিনি। হাওড়ার ১৬ আসনের মধ্যে ৭টিতে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। বাকি অধিকাংশ আসনেই বিরাট ব্যবধানে এগিয়ে ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থীরা। দুর্নীতিতে বিদ্ধ এই নেতা দল ছাড়ায় আখেরে লাভ হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৈশালী ডালমিয়া: তৃণমূল ছেড়ে রাতারাতি দিল্লি গিয়ে বিজেপি যোগ দিয়েছিলেন। টিকিটও পেয়েছিলেন বালি কেন্দ্র থেকে। রাজীবের পাশাপাশি হাওড়ায় জয় পেলে বৈশালীকে তুরুপের তাস করেছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু রাজীবের মতো মুখ থুবড়ে পড়লেন তিনি। প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে তৃতীয় স্থানে রইলেন তিনি।
প্রবীর ঘোষাল: দল বদল করেছিলেন হুগলির এই তৃণমূল নেতা। নিজের ক্যারিশমায় জেতার পরিকল্পনাও করেছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের প্রতীক ছাড়া তিনি যে আদপে কিছুই নন তা আবার প্রমাণিত হল। তৃণমূল তারকা প্রার্থী কাঞ্চন মল্লিকের কাছে ধরাশায়ী হলেন তিনি। তাঁর জেলায় হেরেছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেত্রীরাও।
জিতেন্দ্র তিওয়ারি: সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে কার্যত আদায় কাঁচকলা সম্পর্ক ছিল তাঁর। পরে অবশ্য গেরুয়া শিবিরের যোগ দেন তিনি। বিজেপির একাংশের ধারনা ছিল, তাঁর উপর ভরসা করে পশ্চিম বর্ধমানের অবাঙালি ভোট সম্পূর্ণটাই বিজেপির ঝুলিতে আসবে। কিন্তু সেই কৌশলও ব্যুমেরাং হল। পাণ্ডবেশ্বরে তো নিজের আসনে হারলেনই পশ্চিম বর্ধমানেও সম্মান রক্ষার লড়াইও লড়তে পারল না বিজেপি।
সব্যসাচী দত্ত: রাজারহাট-গোপালপুর-বিধাননগরে দাপট ছিল এই নেতার। দলবদল করে বিজেপিতে যোগ দেন। কিন্তু দলবদলের পর তাঁর প্রতি মানুষের যে আস্থা নেই তা স্পষ্ট হয়ে গেল। বরং তাঁর দল ছাড়ায় শাপে বড় হল তৃণমূলের। বিধাননগরে সব্যসাচী বিরাট ব্যবধানে হারলেন। নিজের পুরনো কেন্দ্র রাজারহাট গোপালপুরেও ধাক্কা খেল বিজেপি। তিন কেন্দ্রেই বিরাট ব্যবধানে জিতলেন তৃণমূল প্রার্থীরা।
অরিন্দম ভট্টাচার্য: জয়ী (বিজেপি)
শীলভদ্র দত্ত: পরাজিত (বিজেপি)
বিশ্বজিৎ কুণ্ডু: পরাজিত (বিজেপি)
রিঙ্কু নস্কর: পরাজিত (বিজেপি)
শংকর ঘোষ: জয়ী (বিজেপি)
রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য: পরাজিত (বিজেপি)
কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী: পরাজিত (বিজেপি)
সুজাতা মণ্ডল: পিছিয়ে (তৃণমূল)
মিহির গোস্বামী: এগিয়ে (বিজেপি)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.