সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়েছিল আগেই। ঘোষিত হয়েছে বামেদের তালিকাও। বিজেপিও ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আনছে তাদের তুরুপের তাস। প্রকাশিত প্রার্থী তালিকার নিরিখে এই সাত আসনে কার্যত সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর দেখবে গোটা বাংলা। ‘বিনা যুদ্ধে’ এক টুকরো জমিও ছাড়তে রাজি নয় কোনও রাজনৈতিক দলই।
কোন আটটি আসনে এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই?
সিঙ্গুর: বছর দশেক আগে এখানকার জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই রাজ্যের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছিল। এক দশক পরে এবার কঠিন ত্রিমুখী লড়াই। তৃণমূলের প্রার্থী বেচারাম মান্না, বাম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য এবং সদ্য তৃণমূলত্যাগী ‘মাস্টারমশাই’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এবার বিজেপির হয়ে লড়াই করবেন এই আসনে। বিজেপির আশা, তৃণমূল স্তর থেকে লড়াই করে উঠে আসা মাস্টারমশাই গেরুয়া শিবিরের পালে হাওয়া টানতে পারবেন। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলেছে দলের গোষ্ঠীকোন্দল। আবার কেন্দ্রের কৃষক বিরোধী নীতির জেরেও বিজেপির বিপরীতে হাওয়া বইছে এই কেন্দ্রে। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, মাস্টারমশাই বিজেপিতে যাওয়ায় তৃণমূল প্রার্থী বেচারামের লড়াই আরও সহজ হয়েছে। তবে বামেদের তরুণ তুর্কি সৃজন ভট্টাচার্য তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে চওড়া থাবা বসাবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
নন্দীগ্রাম: রাজ্যের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের অন্যতম কেন্দ্র ছিল নন্দীগ্রাম। দশক পরে ফের লড়াইয়ের আতুঁরঘর এই কেন্দ্রই। মুখোমুখি লড়াই করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (TMC), তৃণমূল ছেড়ে আসা শুভেন্দু অধিকারী (BJP) এবং বামেদের আরেক তরুণ তুর্কি মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, তৃণমূল নেত্রী এবং শুভেন্দুর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে। কারণ, এই এলাকার অধিকাংশ শহিদ পরিবার রয়েছে তাঁর সঙ্গে। গত ১০ বছর আপদে-বিপদে তাঁকেই কাছে পেয়েছেন এলাকার মানুষ। তবে শুভেন্দুর সহজ জয়ের সামনে বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীর প্রার্থী হওয়া। তবে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় প্রার্থী হলেও লালদের পালে বিশেষ ভোট আসবে না বলেই খবর।
টালিগঞ্জ: কলকাতার প্রকৃত হেভিওয়েট লড়াই এই কেন্দ্রে। তৃণমূলের অরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বামেদের তারকা প্রার্থী দেবদূত ঘোষ। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এবার তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। তুলনামূলকভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদের জনপ্রিয়তা বেশি। ভোট কাটাকাটির অঙ্কে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন দেবদূতও। ফলে এই আসনেও যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বেহালা পূর্ব: কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ছেড়ে যাওয়া কেন্দ্রে এবার কঠিন লড়াই। তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন শোভন-পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছে রূপোলি পর্দার তারকা পায়েল সরকারকে। সিপিএমের সমিতা হর চৌধুরীও রয়েছেন এই লড়াইয়ে।
দিনহাটা: তৃণমূলের উদয়ন গুহরায় বনাম বিজেপি সাংসদ ‘ভূমিপুত্র’ নীশীথ প্রামাণিকের লড়াই। তৃণমূলের জয়ের পথে কাঁটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তুলনামূলকভাবে সহজ লড়াই হবে নিশীথ প্রামাণিকের। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, বিজেপি সাংসদের ব্যক্তিগত ক্যারিশমার জোরে পদ্ম ফুটতে পারে এই কেন্দ্রে। তবে তাঁর লড়াই কঠিন করতে পারেন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী আবদুর রউফ।
উত্তরপাড়া: তৃণমূলের কাঞ্চন মল্লিক বনাম বিজেপির প্রবীর ঘোষালের লড়াই। লড়াইয়ে রয়েছেন সিপিএমের রজত বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রবীর ঘোষাল প্রাক্তন তৃণমূল সৈনিক হলেও বর্তমানে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তবে তাঁর দলবদলকে ভাল চোখে দেখছেন না স্থানীয় বাসিন্দারাই।
চণ্ডীতলা: হুগলির এই আসনেও কঠিন লড়াই। তৃণমূল প্রার্থী খোন্দকার, বিজেপি প্রার্থী যশ দাসগুপ্ত এবং বামেদের হেভিওয়েট প্রার্থী মহম্মদ সেলিম।
সবমিলিয়ে সাত আসনেই হাড্ডাহাড্ডি ত্রিমুখী লড়াই। তবে কে কাকে মাত দেবে, তা বুঝতে অপেক্ষা করতে হবে ২ মে পর্যন্ত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.