কিংশুক প্রামাণিক: অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ঘটনার পর কাউন্সিলরদের আচরণবিধি কী হবে, তা ঠিক করে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এবার বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠকে এ নিয়ে আবার তিনি মুখ খুললেন৷ জানা গিয়েছে শুক্রবার তিনি ওই বৈঠকে বলেন, “কাউন্সিলরদের এলাকার মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে৷ যেসব কাউন্সিলর উন্নয়নমূলক কাজ করবেন না, অন্য কাজে ব্যস্ত থাকবেন, তাঁদের দলও রেয়াত করবে না, প্রশাসনও নয়৷” পুরসভাগুলিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা আরও বলেন, “পুকুর ভরাট করে কোনও প্রোমোটিং চলবে না৷ এরকম ঘটলেই প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে৷” এমনকী, বর্ধমান পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জমি বেহাত হওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এদিন স্থানীয় চেয়ারম্যানও মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়েন৷ জনপ্রতিনিধিদের আরও একবার সতর্ক করে মমতা বলেছেন, “মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে৷ রাস্তা দিয়ে যেতে যেতেই সব কিছু প্রত্যক্ষ করতে হবে৷ ঘুমিয়ে থাকার দরকার নেই৷ ঘুমের জন্য রাত আছে৷”
দার্জিলিং সফরের সময় মমতার নির্দেশে গ্রেফতার হন সল্টলেকে তোলাবাজিতে অভিযুক্ত কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়৷ দলের কাউন্সিলরকে হাজতে পুরে একদিকে তিনি যেমন দলের মধ্যে ঢুকে থাকা বেনোজলদের কঠোর বার্তা দেন, তেমনই রাজধর্ম পালন করেন৷
আজ, শনিবার দলের নীতি-নির্ধারণ কমিটির মাসিক বৈঠক৷ মনে করা হচ্ছে, এই বৈঠকেও তিনি দলকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন৷
বর্ধমানের প্রশাসনিক বৈঠকের শুরু থেকেই মমতা ছিলেন অন্য মেজাজে৷ পারফরম্যান্সে এই জেলা অনেক এগিয়ে থাকলেও যে ক’টি ক্ষেত্রে কাজ এখনও হয়নি, তা নিয়ে বৈঠকের মধ্যেই জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের কৈফিয়ত তলব করেন৷ প্রশংসা যেমন করেছেন, তেমন বকেয়া কাজ দ্রূত শেষ করতে নির্দেশ দেন৷ জানা গিয়েছে, এদিন কার্যত থানা ধরে বৈঠকে উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কাজ পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এক সময় তিনি বলে ওঠেন, “কেতুগ্রামের ওসি কে?” উঠে দাঁড়ান এক অফিসার৷ তাঁকে দেখামাত্র মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনি মানুষের সঙ্গে এত খারাপ ব্যবহার করেন কেন?” সভায় পিন পড়লে তখন শব্দ হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেই চলেন, “এরকম করবেন না৷ মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে৷” এর পর তিনি ডাকেন গলসি থানার ওসিকে৷ সবাই ভাবে এবার তাঁর পালা৷ কিন্তু সেই ওসি দাঁড়াতেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেন, “আপনাকে অনেক ধন্যবাদ৷ ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ নিয়ে আপনি খুব ভাল কাজ করেছেন৷” সবাই তো তখন অবাক৷ তাঁর জমানায় ভাল কাজের পুরস্কার, আর গাফিলতির তিরস্কার যে মূল নীতি, তা মমতা অনেক আগেই ঘোষণা করে রেখেছেন৷ এদিন সেটাই দেখা গেল নানাভাবে৷ মঙ্গলকোট থেকে মেমারি, রায়না থেকে খণ্ডঘোষ– সব এলাকার বিডিওদের দাঁড় করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যা যা বলতে থাকেন, তা থেকে বোঝা যায়, কতটা হোমওয়ার্ক করে তিনি এই বৈঠকে এসেছেন৷
বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলা পরিষদ সদস্য ও সরকারি অফিসারদের একসঙ্গে কাজের সমন্বয় তৈরি করে দেন৷ রানিগঞ্জে ভূমি-ধস আটকাতে তিনি কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু কোনও মিটিংই হয়নি৷ কেন হয়নি? পনেরো দিনের মিটিং করে তাঁকে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ জেলার ডিআই-কে অতঃপর মমতা জিজ্ঞাসা করেন, “আপনার জেলায় কতগুলো স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই?” প্রশ্ন শুনে ডিআই জানান কুড়িটি৷ আরও বলেন, দ্রূত সেগুলো পূরণ হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আদুরি দিবাকর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই পঁচিশ বছর৷ আপনারা করেন কী? দেখেন না? শীঘ্র সব জায়গায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করুন৷” অভিনব এই প্রশাসনিক বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী বর্ধমান জেলাকে কাজের সার্টিফিকেটই দিয়েছেন৷ পাশাপাশি বলেছেন, আরও ভাল কাজ তাদের করতে হবে৷ ধান-পিঁয়াজ উৎপাদনে অগ্রগতি থেকে ডিভিসির বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সবেতেই মমতা সন্তোষ প্রকাশ করেন৷ একসময়ের বাম দুর্গ এই বর্ধমানে এখন আর লালের চিহ্ন নেই৷ মমতার মুখেও নেই বাম জমানার কথা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.