স্টাফ রিপোর্টার: ক্রমশ সামাজিক আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে কন্যাশ্রী৷ শুধুমাত্র বাল্যবিবাহ রোধ নয়৷ নারী শিক্ষা, সুরক্ষা, আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন তথা এগিয়ে চলার সোপান৷ ছাত্রীদের ভিড়ে ঠাসা রবিবাসরীয় নেতাজি ইন্ডোর বার্তা দিল, আগামিদিনে সমাজে আন্দোলনের পতাকা ধরবে মেয়েরাই৷
সালটা ২০১৩৷ এ রাজ্যের ছাত্রীদের ভবিষ্যত্ জীবনের কথা ভেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করেন ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প’৷ ছাত্রীরা পেল তাদের ভবিষ্যত্ জীবনের রসদ৷ এগিয়ে চলার ‘বন্ধু’কে৷ একটু একটু করে চলতে চলতে তিনটে বছর পারও করে ফেলল কন্যাশ্রী৷ সাফল্যের সিঁড়িতে উঠল বেশ কয়েক ধাপ৷ প্রশংসা করল ইউনিসেফ৷ ইউনিসেফের কর্মকর্তারা জানালেন, কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুফল মিলেছে৷ স্কুলছুটের সংখ্যা কমেছে৷ আর ১৪ আগস্ট রচিত হল, রাজ্যের ছাত্রীদের ‘স্বাধীনতা দিবস’ হিসাবে৷ উত্তরণ ঘটল ‘কন্যাশ্রী অ্যাপস’-এর মাধ্যমে৷ রবিবার যার উদ্বোধন করলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷
কন্যাশ্রী প্রকল্পের অধীন ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষিকা, সরকারি আধিকারিকরা আবেদনপত্রের পরিস্থিতি জানতে পারবেন ‘কন্যাশ্রী অ্যাপস’-এর মাধ্যমে৷ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঠিকমতো পড়েছে কি না, আবেদনপত্রের বর্তমান অবস্থান, ফর্মে কোনও ত্রুটি ছিল কি না, পরবর্তী অনুষ্ঠানের দিন ও সময়– এ যাবতীয় বিষয় এবার অ্যাপসের মাধ্যমে জানতে পারবে ছাত্রীরা৷ সেইসঙ্গে ছাত্রীদের কোনও অভিযোগ থাকলে তারা এই অ্যাপসের মাধ্যমে জানাতে পারবে৷ কন্যাশ্রী প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যে সমস্ত অনুষ্ঠান হয়, তার তথ্য-ছবি আপলোড করা যাবে অ্যাপসে৷ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরাও এই অ্যাপসের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য জানাতে পারবেন৷ ইতিমধ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুফল ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের সর্বত্র৷ তৈরি হয়েছে কন্যাশ্রী সংঘ৷ পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছাত্রীরা পাচ্ছেন আর্থিক সাহায্য৷ রোধ হয়েছে বাল্যবিবাহ৷
আত্মসুরক্ষার জন্য ছাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে ক্যারাটে ট্রেনিং৷ হাতের কাজ শেখানো হচ্ছে৷ ছাত্রীদের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রির ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে প্রশাসন৷ বলা ভাল একজন ছাত্রীকে নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে সবরকম সাহায্য করছে সরকার৷ ছাত্রীরাও জানাল, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাশ্রী প্রকল্প আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে৷ মুখ লুকিয়ে থাকা নয়৷ শিক্ষিত হওয়া৷ পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করা৷ সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নাম কন্যাশ্রী৷” রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বললেন, “কন্যাশ্রী প্রকল্প আজ বিশ্বের দরবারে স্বীকৃতি পেয়েছে৷ এই প্রকল্প নিয়ে প্রশংসা করেছে ইউনিসেফ৷ ছাত্রীদের পড়াশোনা, তাদের এগিয়ে চলার জন্য সরকার পাশে রয়েছে৷” নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. শশী পাঁজা বলেন, “ছাত্রীদের অভিভাবকদের কাছে মোবাইল রয়েছে৷ কন্যাশ্রী অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁরা একাধিক তথ্য জানতে পারবেন৷ কোনও অভিযোগ থাকলে জানাতে পারবেন৷ এমনকী, নিজেরাও তথ্য দিতে পারবেন৷ ঘরে বসেই ছাত্রীরা যাতে এই সুবিধা পায়, তার জন্যই কন্যাশ্রী অ্যাপস চালুর সিদ্ধান্ত৷’’
কন্যাশ্রীর কে-ওয়ান প্রকল্পে ইতিমধ্যে ৩১ লক্ষ ছাত্রী বার্ষিক ৭৫০ টাকা করে পাচ্ছে৷ কে-টু প্রকল্পে এককালীন ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে ৭ লক্ষ ছাত্রীকে৷ এ বছর কন্যাশ্রী প্রকল্পে প্রথম হয়েছে নদিয়া জেলা৷ দ্বিতীয় স্থান বীরভূম ও তৃতীয় স্থান পেয়েছে কলকাতা৷ ভাল কাজের জন্য বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে বাঁকুড়া ও মালদহ জেলা৷ স্কুলভিত্তিক সাফল্যের হারে প্রথম হয়েছে পার্ক সার্কাস গার্লস৷ দ্বিতীয় চৌবাঘা গার্লস হাই স্কুল৷ তৃতীয় হয়েছে শরৎচন্দ্র পাল গার্লস স্কুল৷ বিশেষ সম্মান পেয়েছে নবজাতক বিদ্যাভবন৷ রাজ্যের মধ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পে সাফল্যের সারিতে রয়েছে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, বিবেকানন্দ উইমেন কলেজ, কলকাতা উইমেন কলেজ৷ বিশেষ সম্মান মুরলিধর গার্লস কলেজকে৷ ছ’টি ভাষায় কবিতা ও পোস্টার প্রতিয়োগিতায় রাজ্যের মধ্যে পুরস্কার পেয়েছেন ২১ জন৷ একইসঙ্গে ১৫ জন কন্যাশ্রীকে বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শিতার জন্য দেওয়া হয় বিশেষ সম্মান৷ এদিন কন্যাশ্রী পোর্টাল-এর মাধ্যমে ছাত্রীদের সরাসরি শংসাপত্র প্রদান করেন অর্থমন্ত্রী৷ ১৫ লক্ষ ছাত্রীকে কন্যাশ্রী সার্টিফিকেট দেওয়া হয়৷ ছাত্রীরা তাঁদের এই সার্টিফিকেট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবে৷ শেষ আর্থিক বছরের একটি রিপোর্ট এদিন পেশ করেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.