স্টাফ রিপোর্টার: শিশু অবস্থা থেকে তিনিই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিভাবক৷ অপার স্নেহ-ভালবাসায় তাঁকে গড়েছেন৷ তাই পড়াশোনার শেষে চাকরি না করে পিসির আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই রাজনীতিতে আসেন ভাইপো৷ এখন তিনি সাংসদ শুধু নন, তৃণমূল যুব সংগঠনের শীর্ষে৷ তিলে তিলে অভিষেকের এই উত্তরণ কীভাবে? কোন শিক্ষায়? এবার তা প্রকাশ্যেই বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এবং বুঝিয়েও দিলেন আজও সেই শিক্ষাই তিনি দিয়ে চলেছেন প্রিয় ভাইপোকে৷ বেশ কিছুদিন পর পিসির সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে৷ খুশির ইদের সকালে ডায়মন্ডহারবারের তরুণ সাংসদকে পাশে নিয়ে মমতা বললেন, “আমি অভিষেককে সব জায়গায় নিয়ে যাই না৷ কিন্তু এখানে নিয়ে এলাম, কারণ পরম্পরাগুলো শিখতে হবে৷” ইদ যে আসলে সর্বধর্মের মানুষের কাছে মিলনের উৎসব, খুশির উৎসব, তা মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “আমাদের পরিবারের পরম্পরা হল শিশুদের সর্বধর্ম সমন্বয়ের শিক্ষা দিয়ে বড় করে তোলা৷ ও যখন ছোট ছিল তখনও এই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে৷”
‘পিসি’ হলেও তিনি অভিষেকের কাছে ‘দিদি’৷ ছোটবেলা থেকেই এই ডাক৷ যেমন ডাকে তাঁর অপূর্ব শিশুকন্যাটিও৷ অনেকদিন পর সেই প্রিয় দিদির সঙ্গে এক গাড়িতে চেপে রেড রোডে ইদের নমাজে৷ মাইক হাতে নিয়ে নিজের উচ্ছ্বাস গোপন করলেন না অভিষেক৷ দিনটির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে শোনালেন অসাধারণ এক শায়েরি৷ অভিষেক বরাবরই ভাল বক্তা৷ এদিন অবশ্য বক্তৃতা দেওয়ার ছিল না৷ তবু সবাইকেই অভিনন্দন জানিয়ে তাঁর সংক্ষিপ্ত কথা, “এই ইদ হল পবিত্র ও মিলনের উত্সব৷ সবাইকে শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন৷” এরমধ্যেই দেখা গেল তাঁর হাত থেকে মাইকটা নিজের হাতে নিলেন মমতা৷ এবং বললেন কেন আজ তিনি এই মিলন মেলায় শামিল করেছেন অভিষেককে৷ একইসঙ্গে বোঝালেন পারিবারিক পরম্পরাও৷
প্রথা মেনে সকাল ন’টার আগেই ভরে গিয়েছিল রেড রোড ও সংলগ্ন এলাকা৷ নমাজ পড়তে হাজির অগণিত মানুষ৷ যেদিকে চোখ যায় শুধু সাদা টুপি পরিহিত মাথা৷ নমাজ শেষে মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশান্তির বার্তা দিলেন৷ ইদের শুভেচ্ছা জানালেন সবাইকে৷ মাইক হাতে শুভেচ্ছা জানানোর পর সাংসদ ভাইপো আওড়ালেন, ‘সরফরোশি কি তমন্না অব হামারে দিল মে হ্যায়৷’ মুখ্যমন্ত্রীও শের-শায়েরি করলেন৷ বললেন, “মুদ্দে লাখ বুরা চাহে তো ক্যায়া হোতা হ্যায়, ওহি হোতা হ্যায় যো মঞ্জুরে খুদা হোতা হ্যায়৷ আল্লা তাঁর সঙ্গেই থাকেন যিনি আল্লার সঙ্গে থাকেন৷” ইদের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মমতার বক্তব্য থেকে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, অভিষেকের এবার প্রকৃত অভিষেক হল৷ তবে বক্তব্যের অনেকটা জুড়ে এদিন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, “সকলকে ইদ মুবারক৷ নমাজ হয়েছে৷ আকাশে সূর্যের দেখাও মিলেছে৷ এটা খুশির সকাল৷ ইদ মানে বিশ্বাস৷ ইদ মানে জিন্দেগি৷ ইদ না থাকলে জিন্দেগি শুনশান হয়ে যাবে৷ আপনারা সকলে ভাল থাকুন৷ যেভাবে কষ্ট করে, ত্যাগ স্বীকার করে রমজান মাস পালন করেন, তার তুলনা হয় না৷ আগামিদিনে বাঙালি বিশ্বকে শান্তির পথ দেখাবে৷
নমাজকে কেন্দ্র করে যাতে শহরে কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা না ঘটে তা এদিন নিশ্চিত করেছে পুলিশ৷ মঞ্চে ছিলেন কলকাতার নগরপাল রাজীব কুমার ও মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ মন্ত্রী জাভেদ খান ও দুই সাংসদ সুলতান আহমেদ এবং ইদ্রিশ আলিও মঞ্চে ছিলেন৷ ইমাম কারি ফজলুর রহমান নমাজের সূচনা করেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.