কৃষ্ণকুমার দাস: বাংলার প্রতি রাজনৈতিক বৈষ্যমের অভিযোগ তুলে ফের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক ইস্যুতে প্রতিবাদে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বললেন, “১০০ দিনের কাজ থেকে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, কোনও ক্ষেত্রেই পাওনা টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে না৷ উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক বৈষম্য হচ্ছে৷ আমরা বিষয়টি ভালভাবে নিচ্ছি না৷ কেন্দ্র পাবলিসিটি বেশি করে, মানুষের জন্য কোনও কাজ করে না৷ বার বার চাইলেও গরিব মানুষের উন্নয়নে প্রকল্পের বরাদ্দ ও পাওনা দিচ্ছে না৷”
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার উন্নয়ন পর্যালোচনা নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী যে বিষয়গুলি নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দাগেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আর্থিক বরাদ্দ ও ভিন রাজ্যের জল ছাড়া৷ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ–(১) ১০০ দিনের কাজের পাওনা টাকা কেন্দ্রের তরফে দেওয়া হচ্ছে না৷ গরিব মানুষকে কাজ করিয়েও প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা বকেয়া না পাওয়ায় দেওয়া যাচ্ছে না৷ (২) গ্রামের রাস্তার জন্য বরাদ্দ টাকা আটকে রেখেছে৷ একসঙ্গে ৩৯টি স্কিম বন্ধ করে দিয়েছে৷ ৫৮টি প্রকল্পে আগে কেন্দ্র ৯০ শতাংশ টাকা দিত৷ এখন পুরো উল্টে দিয়েছে৷ রাজ্যর ঘাড়ে ৯০ শতাংশ চাপিয়ে কেন্দ্র মাত্র দশ শতাংশ দিচ্ছে৷ এটা পুরোপুরি পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে৷ অথচ কেন্দ্র নানা খাতে কর বসিয়ে প্রচুর টাকা রাজ্য থেকে নিয়ে যাচ্ছে৷ (৩) ঝাড়খণ্ড থেকে না জানিয়ে ডিভিসির প্রচুর জল ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে৷ ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়লে ম্যান-মেড বন্যা হয়৷ শুনলাম, আজই ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়বে৷ বহুবার রাজ্যর তরফে আমরা ডিভিসির জলাধারকে ড্রেজিং করতে বলেছি৷ ড্রেজিং করলে অতিরিক্ত দু’লক্ষ কিউসেক জল রাখা যাবে৷ কিন্তু কেন্দ্র ড্রেজিং করছে না৷ ফলে ঝাড়খণ্ডের জল এসে প্লাবিত করছে রাজ্যের বহু জেলা৷
সোনারপুরের মহামায়াতলার জয়হিন্দ অডিটোরিয়ামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে জেলার প্রতিটি ব্লক ধরে ধরে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বিধায়ক, পুরপ্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা একে একে প্রত্যেকের নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে বক্তব্য রাখেন৷ প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক চলে৷ বৈঠক শুরুর আগে ক্যানিং মহিলা থানা-সহ ২৫টি প্রকল্পের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মিড-ডে মিল প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে একটি বিশেষ অ্যাপ-এর উদ্বোধন করেন তিনি৷ মাছ ধরতে গিয়ে সমুদ্রে নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের সন্ধান থেকে শুরু করে আয়লার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতির অগ্রগতি বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা হয় বৈঠকে৷ পরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের সন্ধান মিলেছে৷ রাজ্য মৎস্যজীবীদের পাশে সমস্ত রকম সাহায্য নিয়ে রয়েছে৷” সুন্দরবনে ভুটভুটিকে কীভাবে পরিমার্জিত ও পরিবেশবান্ধব করা যায় তা নিয়ে বৈঠকে পরিবহন দফতরকে সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আবার নদীকেন্দ্রিক সুন্দরবনের পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়নে পরিবহন সচিবকে জরুরি ভিত্তিতে ১০টি ভেসেল তৈরি করে দেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি৷ তবে সুন্দরবনের বেশ কিছু এলাকায় যে এখন বিদ্যুত্ পৌছয়নি তা উল্লেখ করে দ্রুত প্রকল্প সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পানীয় জল ও রাস্তা নির্মাণের প্রকল্পগুলি দ্রুত সম্পূর্ণ করার জন্য দুই দফতরের সচিবদের নির্দেশ দেন তিনি৷ নাম না করে যে সমস্ত ঠিকাদার প্রকল্পের টেন্ডার পেয়ে সময়ে কাজ শেষ করছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷
মুখ্যমন্ত্রী এই বৈঠকে জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের আরও একবার স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “জলাজমি ভরাট করার ক্ষেত্রে কাউকে রেয়াত করা যাবে না৷ সঙ্গে সঙ্গে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে৷” ভাঙড়ে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির দায়িত্ব নিয়েও যাঁরা কাজ শুরু করেনি তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে বলেন তিনি৷ সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী জানান,“নদীমাতৃক এই জেলায় আগের চেয়ে অনেক ভাল কাজ হয়েছে৷ কৃষি থেকে শিল্প সব বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে৷ ভোট থাকা সত্ত্বেও ১০০ দিনের কাজে এরই মধ্যে ২৭ দিন হয়েছে৷ প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ডেলিভারি ৬১ থেকে বেড়ে ৮৭ শতাংশ হয়েছে গত এক বছরে৷” বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, শোভন চট্টোপাধ্যায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, মণ্টুরাম পাখিরা, গিয়াসউদ্দিন মোল্লা, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদ সভাধিপতি সামিমা শেখ, মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিজি সুরজিত্ পুরকায়স্থ৷ বৈঠকে ভাঙড় থেকে ছিলেন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা, সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলাম ও জেলাপরিষদ সদস্য কাইজার আহমেদ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.