সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০১৬ সালে সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছিল খবর পাওয়ার ঠিকানা৷ একদিকে সোশ্যাল মিডিয়া যেমন পরিচিতি দিয়েছে বহু বেনামি মানুষ এবং তাঁদের ভাল কাজকে, অন্যদিকে এই সোশ্যাল মিডিয়াই ভাইরাল করেছে ‘মোকাম্বো’-র মতো রেস্তরাঁর কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যবহারকে৷ একদিকে সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ভাগ্যবদল করেছে শৌভিকের মতো গায়কের, তেমনই সিরিয়ার রক্তস্নাত বালক ওমরানের মুখ প্রশ্ন তুলেছে মানবিকতা নিয়ে৷ ২০১৬ যেন বুঝিয়ে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ঠিক কতটা শক্তিশালী হতে পারে৷ এবছর এমনই ভাইরাল হয়ে যাওয়া কিছু ঘটনা এবং কিছু মুখ রইল এই প্রতিবেদনে৷
পাকিস্তানি চা-ওয়ালা: ২০১৬ সাল যেন এক নিমেষে পাল্টে দিল আরশাদের জীবন৷ রাতারাতি গোটা বিশ্ব চিনে গেল পাকিস্তানের সেই চা-ওয়ালাকে যাঁর নীল চোখে যেন রয়েছে সমুদ্রের গভীরতা৷ হলিউড আর বলিউড হিরোদের রীতিমতো টেক্কা দিয়ে পাকিস্তানি এই চা-ওয়ালাই হয়ে গেলেন সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল মুখ৷ এক নামে সকলেই চিনে গিয়েছিলেন তাঁকে৷ লাজুক এই নীল চোখের ছেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় মেলা খ্যাতির পরই নতুন সিনেমায় সই করেছেন বলেও জানা গিয়েছে৷
নেপালের তরকারিওয়ালি: নীল চোখের চা-ওয়ালা একদিকে যখন মন কেড়েছেন মহিলাদের, তখনই আবার ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছিল নতুন মুখ৷ সুন্দরী, সরল চোখের নেপালের তরকারিওয়ালিকেও রাতারাতি সেলিব্রিটি বানিয়েছে ইন্টারনেট৷ কোনও এক অচেনা চিত্রগ্রাহকের খুঁজে নেওয়া এই বেনামি মুখই চলতি বছরে ঝড় তুলেছিল নেটদুনিয়ায়৷
সিঙ্গাপুরের সিকিওরিটি গার্ড: চলতি বছরে ইন্টারনেটে অপর এক ভাইরাল মুখ হলেন লি মিনওয়েই৷ সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের এই নিরাপত্তারক্ষীর ছবি ফেসবুকে প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর ভাইরাল হতে বেশি সময় নেয়নি৷ সিকিওরিটি গার্ডের স্মিত হাসি যে প্রথম ঝলকেই মন ভাল করে দিয়েছিল, তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না৷
হিরো আলম: “মারব বগুরায়, লাশ পড়বে মাগুরায়”৷ গোটা বছরজুড়ে আজগুবি এমন বহু ডায়লগই দিয়েছেন বাংলাদেশের হিরো আলম৷ আশ্চর্য সাজপোশাক এবং তথাকথিত হিরোসুলভ না হয়েও তাঁর হিরো হয়ে ওঠার গল্পই তাঁকে করে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল৷ হিরো আলমকে এক নামে চেনেন না এমন কোনও মানুষের খোঁজ মেলাই বোধহয় এখন সম্ভব নয়৷
কে আর কে: ইসসে বচকে রেহনা। বছরভর বলি সেলেব থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতা কাউকেই ছেড়ে কথা বলেননি কে আর কে৷ কমল আর খানের কুরুচিকর মন্তব্য গোটা বছরই তাঁকে রেখেছে খবরের শিরোনামে৷ টুইটারে একাধিক খারাপ মন্তব্য এবং ‘সোশ্যাল’ ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েই কে আর কে চলতি বছরে হয়ে গিয়েছেন ভাইরাল৷
ওমরান দানিশ: ২০১৬ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার মুখ হয়ে উঠেছিল ছোট্ট ছেলেটি৷ সিরিয়ার বিমান হামলায় পরিবার-পরিজনকে হারিয়ে হাসপাতালে ঠিকানা হয়েছিল ছোট ছেলেটির৷ ওমরানের রক্তে ভেসে যাওয়া মুখ, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল৷ দানিশের রক্তাক্ত ছবিই গোটা বিশ্বের মানবিকতা নিয়ে রেখে গিয়েছিল বহু প্রশ্ন৷
অনন্ত আম্বানি: মুকেশ ও নীতা আম্বানির ছেলেটি ২০১৬ সালে হাজির হয়েছিলেন এক নতুন অবতারে৷ মেদ ঝরিয়ে হয়ে উঠেছিলেন ফিট অ্যান্ড ফাইন৷ গোলগাল ১০৮ কেজির অবতার থেকে স্মার্ট হয়ে ওঠা অনন্ত আম্বানি ২০১৬ সালে সোশ্যাল মিডিয়ার মন জয় করে নিয়েছিলেন৷
কেন বোন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যখন গোটা দেশ রীতিমতো দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে, তখনই প্রকাশ্যে আসেন কেন বোন৷ হিলারি ক্লিন্টন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কসভাগুলিতে খুবই শান্তভাবেই বসে থাকতেন কেন৷ কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের তাঁর বিচক্ষণ প্রশ্ন করা তাঁকে প্রচারের আলোয় এনে দেয়৷ শান্তমতি কেনকে রাতারাতি সেলেব বানিয়ে দেয় সোশ্যাল মিডিয়া৷
অরিজিৎকণ্ঠী শৌভিক: পেশায় নিরাপত্তারক্ষী শৌভিককে মুহূর্তে বিখ্যাত করে তুলেছিল সোশ্যাল মিডিয়া৷ তাঁর গাওয়া গান সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর থেকেই তাঁর গানের তুলনা টানা হয়েছিল অরিজিত সিংয়ের গানের সঙ্গে৷ আর এরপরেই বলিউডে প্লে-ব্যাক করার সুযোগ পেলেন তিনি৷ জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সুরে বলিউডে গান গাইবেন শৌভিক৷
গায়ক মহম্মদ আলম: “ইয়াঁদ পিয়া কি আয়ে” এই গানটাই বড় দরদ দিয়ে গেয়েছিলেন করাচির অটোচালক৷ চোখ বুজে শুনলে মনে হবে যেন কোনও জলসায় বসে পোক্ত রেওয়াজ করা শিল্পী গাইছেন এমন গান৷ করাচির অটো রিক্সাচালক মহম্মদ আলমের গান সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ছড়িয়ে পরার পরই রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি৷ এই ভাইরাল ব্যক্তিত্বের নাম আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেছিল সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে৷
‘ফাস্টেস্ট উওম্যান ক্যাশিয়ার’: নোট বাতিলের সময় যখন ব্যাঙ্কে উপচে পড়ছে ভিড়, তখনই ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র-এর পুণে শাখায় কর্মরতা প্রেমলতা শিণ্ডে তাঁর ধীর গতিতে কাজ করার জন্য ভাইরাল হয়ে গেলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ তাঁর কাজের জন্য তাঁকে রাতারাতি হাসির খোরাক বানিয়ে ফেলেছিল সোশ্যাল মিডিয়া৷ মজা করে তাঁকে বলা হচ্ছিল ‘ফাস্টেস্ট উওম্যান ক্যাশিয়ার’৷ প্রথমে মজা করা হলেও পরে জানা যায়, তীব্র শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন প্রেমলতা৷ দু’বার হার্ট অ্যাটাক এবং প্যারালাইটিক স্ট্রোকও হয়েছে তাঁর৷ কিন্তু হার মেনে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি৷ আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সোশ্যাল মিডিয়া পস্তেছে নিজের মতো করেই৷
ভারতীয় সেনার হুমকি: সদ্য উরি হামলায় শহিদ হয়েছেন ১৯ জন ভারতীয় সেনা৷ সতীর্থদের হত্যার বদলা নেওয়া হবে৷ এমন কথাই সোজাসাপটা জানিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক জওয়ান৷ সেনাবোঝাই বাসে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে হুমকি দিয়েছিলেন, এক ইঞ্চিও ছেড়ে কথা বলবে না ভারতীয় সেনাবাহিনী৷ জওয়ানের এই বক্তব্যই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল৷
এলার ‘ভাইরাল’ অধ্যায়: বাবা-মা পরস্পরের কাছে গেলেই ঠোঁট ফুলে যায় ছোট্ট এলার৷ প্রথমটায় ফুঁপিয়ে আর তারপর জোরালভাবেই কেঁদে ভাসায় সে৷ যেই বাবা-মা একে অপরের থেকে দূরে গেলেন, অমনি মেয়ে চুপ৷ আবার যেই বাবা মায়ের গালে চুমু খেলেন, মেয়ের কান্না শুরু৷ ছোট্ট মেয়ের এই কাণ্ড-কারখানাই বাবা-মা ভিডিও করে ছেড়ে দিয়েছিলেন ইন্টারনেটে৷ আর তারপরেই রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায় ছোট্ট এলার এই কাণ্ড-কারখানা৷ দেড় লক্ষের বেশি শেয়ার হয় সংশ্লিষ্ট ভিডিওটি৷ আর এর ফলেই রাতারাতি এলা হয়ে ওঠে সকলের কাছে ভীষণ পরিচিত এক মুখ৷
টুইট কা সুলতান: ২২ গজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর ভার্চুয়াল জগতের খেলাটাও বেশ আয়ত্ত করে নিয়েছেন বীরেন্দ্র শেহবাগ৷ ২০১৬ সাল জুড়ে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় রীতিমতো রাজ করলেন তিনি৷ টুইটারে ঝড় তুলেছিলেন মজাদার কথা বলে৷ সহ ক্রিকেটারদের জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তা হোক বা নিজের স্ত্রীকে বিবাহবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানানো, ২০১৬ সালে টুইটারে মজা করার কোনও অন্ত রাখেননি শেহবাগ৷ আর প্রাক্তন ক্রিকেট তারকার এই টুইটই ছিল চলতি বছরের ভাইরাল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.